বঙ্গবন্ধু টানেল শেখ হাসিনার ‘ব্যাংকোয়েট ডিপ্লোম্যাসি’র ফল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল তৈরিতে প্রথমে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি চীন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত ‘ব্যাংকোয়েট ডিপ্লোম্যাসির‘ কারণে চীনকে রাজি করানো সম্ভব হয়।

২০১৪ সালের জুন মাসে চীন সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। ৯ জুন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেসিয়াংয়ের সঙ্গে মূল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে  টানেলের বিষয়টি উত্থাপিত হলে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি বেইজিং। ‍কিন্তু রাতে ব্যাংকোয়েটে খাবার টেবিলে টানেল তৈরিতে চীনকে রাজি করাতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা এবং মধ্যরাতের পরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের সময়ে সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির জন্য বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চুক্তি সই করার বিষয়ে একটি সমঝোতা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি চীন।

শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেসিয়াং এর মধ্যে মূল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বেইজিং জানান, চীনের যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলি নদীতে টানেল তৈরি করার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল, তারা এটি করতে আগ্রহী নয়। ওই একই বৈঠকে শেখ হাসিনা বেইজিং কর্মকর্তাদের বলেন, ‘চীনের নেতৃত্বে যে এশিয়া এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে যোগ দিতে বাংলাদেশ তৈরি (বাংলাদেশ ইজ রেডি টু জয়েন চায়না-লেড এশিয়ান গ্রোথ)।’

এরপর ওই রাতে শেখ হাসিনার সম্মানে এক ব্যাংকোয়েটের আয়োজন করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী্। ওই ব্যাংকোয়েটে যোগ দেওয়ার আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন খাবারের টেবিলে লি কেসিয়াংকে টানেলের বিষয়ে পুনরায় অনুরোধ করেন।

ব্যাংকোয়েটে খাবার টেবিলে ওই সময়ে চীনের অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলি নদীতে টানেল নির্মাণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক সাড়া দেন লি কেসিয়াং। দুই প্রধানমন্ত্রী স্ব স্ব দেশের কর্মকর্তাদের খাবার টেবিলে ডেকে পাঠান এবং ওই মুহূর্তে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষ করার নির্দেশ দেন।

ওই সময়ের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘গোটা জিনিসটা সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতির জন্য। খাবার টেবিলে বসেও তিনি সফলতার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শেষ করেছিলেন।

‘ওই সময়ে আমাকে এবং তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব ও পরবর্তী সময়ে কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে এ বিষয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। চীনের কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ তাদের অফিস খুলে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে যান। আনোয়ারুল ইসলামের পেন ড্রাইভে টানেল সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়া ছিল। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, বাংলাদেশ সরকার এবং চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তির পরিবর্তে দুই দেশের সরকার সমঝোতা স্মারক সই করবে। পরে চীন সরকার এ বিষয়ে একজন ঠিকাদারকে নিয়োগ দেবে বলে জানায়।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘আমরা কয়েক ঘণ্টা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি এবং মধ্যরাতের পরে ওই চুক্তি সই হয়।’

Views: 12