পদ্মা সেতু: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শরীয়তপুরের অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন করেন। এরপর ২৬ জুন যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতুটি। সোমবার উদ্বোধনের একমাস অতিক্রম করল গৌরবের পদ্মাসেতু। সেতু চালু হওয়ার পর গত ২৬ জুন থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ২৮ দিনে প্রায় পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৪২০টি যানবাহন সেতু পাড়ি দিয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে নিয়মিত টোল আদায় করা হয়।

সেতু ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় বিভিন্ন পরিবহন যাতায়াত করছে। এতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শরীয়তপুরের অর্থনীতি। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর শরীয়তপুরের পরিবহন খাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

নতুন উদ্যোক্তা শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির অংশীদার সাইম মোল্লা বলেন, পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় পর শরীয়তপুরের পরিবহন খাতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা সরাসরি শরীয়তপুর-ঢাকা বাস সার্ভিস চালু করেছি। এতে আমরা বাস মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছি, তেমনিভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। এছাড়া শরীয়তপুর থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় যাত্রী নিয়ে ঢাকাতে যেতে পারছি। সুবিধা পাচ্ছেন যাত্রীরাও।

সেতুটি চালু হওয়ায় পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে শরীয়তপুরের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। শরীয়তপুরে গড়ে উঠতে শুরু করেছে পর্যটন শিল্প, আধুনিক ক্লিনিক, হিমাগার। আবার কৃষিপণ্য সহজেই রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করা যাচ্ছে। পদ্মাসেতু কৃষককে সরাসরি বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে।

জাজিরার মিরাশার এলাকার কৃষক সিরাজ ফকির জানান, তিনি প্রায় একযুগ দুই ফসলি জমিতে সবজি চাষ করেন। কিন্তু আগে ঢাকায় সরাসরি সবজি বিক্রি না করতে পারায় লাভের মুখ দেখেননি। এখন সময় পাল্টেছে। বদলেছে তার ভাগ্য। করলা, কাঁচা মরিচ, চিচিঙ্গা, পটলসহ বিভিন্ন সবজি খেত থেকে তুলে ঢাকার কারওয়ান বাজার মোকামে বিক্রি করছেন তিনি।

শুধু সিরাজের একার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, শরীয়তপুরের কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে পদ্মাসেতু। সেতু চালুর পর বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।

জাজিরার মিরাশার চাষি বাজারের আড়তদার মো. মাসুদ টেপা বলেন, আমরা এই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে থেকে সরাসরি সবজি কিনে ব্যবসা করে থাকি। আগে সরাসরি ঢাকায় সবজি বিক্রি করা অনেকটা কষ্টের ছিল। ফেরিঘাটে সময় বেশি লাগতো এবং খরচও বেশি হতো। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় সরাসরি ঢাকায় সবজি বিক্রি করতে পারছি। তাজা সবজি সরবরাহ করতে পারায় দামও পাচ্ছি আগের চেয়ে বেশি। ফলে কৃষি হয়ে উঠছে আগের চেয়ে লাভজনক।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জামাল হোসেন বলেন, পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় অন্যান্য সেক্টরের মতো কৃষিভিত্তিক শিল্পেও একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। নদীবেষ্টিত এলাকা হিসেবে আমরা পর্যটনশিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সেতু উদ্বোধনের পর অনেক ধরনের উন্নয়ন আমরা দেখছি। শরীয়তপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এরই মধ্যে কৃষি সেক্টরে অনেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমরা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদেরকে উৎসাহিত করছি।