মেয়াদ পূর্তির এক বছর আগেই ‘পল্লীতে ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ দিয়ে রেকর্ড

বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অনেক প্রকল্পই বারবার সংশোধন করা হয়। সময় বাড়ানো হলেও তা শেষ হতে চায় না। কিন্তু পল্লীতে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগে দেখা দিয়েছে ব্যতিক্রম। প্রকল্পটির মেয়াদ পূর্তির এখনো প্রায় এক বছর বাকি। তারপরও শতভাগ শেষ করে রেকর্ড করল। শুধু তাই নয়, এতে ব্যয়ও কমছে ১৮১ কোটি টাকা বা প্রায় তিন শতাংশ। কারণ ৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি ব্যয় কমিয়ে ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। এর সংশোধনীর প্রস্তাব বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তা যাচাই-বাছাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে খুব শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো)।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ বিশেষ ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ লাখ গ্রাহককে সংযোগ প্রদান’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। সরকারি কোষাগার থেকে এ অর্থ ব্যয় ধরা হয়। আর বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্পের প্রধান কাজ ধরা হয় ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ দেয়া। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৫ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করারও সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার ৩৩ কেভি নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৫৮৬ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইন পুনর্বাসন, ১০০টি ৩৩/১১ কেভি নতুন সাব-স্টেশন নির্মাণ, ৫০টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করারও সিদ্ধান্ত হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে একই সঙ্গে ৩৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও এক হাজার ৩৭৭ বর্গমিটার অবকাঠামো নির্মাণ করার কথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এর অনুমোদন দেন।
এর কাজও শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মালামাল, যন্ত্রপাতিসহ কিছু ব্যাপারে কম-বেশি হওয়ার কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাতে ৩৩ কেভির লাইন আপগ্রেডেশন ৫০০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ কিলোমিটার করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ৩৩ থেকে কমিয়ে ২৭ একর ধরা হয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে ২০১৫ সালের ২৯ জুনে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল তাতে অনুমোদন দেন। তাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৬ হাজার ৪২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় বাড়ানো হয় দুই বছর।
এরপর ভালোভাবে এগিয়ে যেতে থাকে প্রকল্পটির কাজ। তাই মেয়াদপূর্তির আগেই শেষ হয়েছে ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ। ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫ হাজার ৬৮২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তাই প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০১৭ সালের আগে ওই কাজ শেষ হয়েছে। তাই আনুষঙ্গিক অন্যান্য যে কিছু কাজ রয়েছে তার জন্য ৬ মাস সময় লাগবে। এ জন্য আগের চেয়ে ৬ মাস কমিয়ে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। আর ব্যয় ৬ হাজার ৪২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এতে ব্যয় কমছে ১৮১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। তাই যাচাই-বাছাই করতে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে কারো কোনো ওজর-আপত্তি দেখা যায়নি। তবে প্রকল্পটিতে চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ৭২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও আগামী জুনের মধ্যে শেষ করতে সংশোধিত এডিপিতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চাহিদা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ প্রকল্প বারবার সংশোধন করে সময় ও ব্যয় বাড়িয়েও শেষ হয় না। এমনকি গত অর্থবছরে কিছু প্রকল্প সমাপ্তি বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। আর পল্লী বিদ্যুতের এ প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ দেয়ার সাফল্য অর্জন করেছে। এটা উন্নয়ন কাজে রেকর্ড। অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও উচিত এ প্রকল্পের মতো কাজ করা।