নোয়াখালীর জাহাইজ্জার চর যেভাবে স্বর্ণদ্বীপ

এক সময়ের ডাকাত-সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আতঙ্কিত জাহাইজ্জারচরের নাম সেনাবাহিনীর প্রস্তাবনায় বর্তমান সরকারের সময় স্বর্ণদ্বীপ করা হয়েছে। সাগর নদী খাল ও জঙ্গল পরিবেষ্টিত নোয়াখালীর সূবর্ণচরের কাটাখাল থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনার প্রায় ৬ কিলোমিটার সাগরপথ পাড়ি দিয়ে জনবসতিহীন বিশাল এ স্বর্ণদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে। সরকারের সহায়তায় ও সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চরটিকে আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে দ্বীপটি এশিয়ার মধ্যে সেরা ও আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সেনাবাহিনী।

এদিকে আজ মঙ্গলবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্বর্ণদ্বীপ সফর করে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন করবেন। কুমিল্লা থেকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সোমবার বিকালে এ দ্বীপটিতে পৌঁছায়। এই দ্বীপের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা-নারায়ণগঞ্জে বঙ্গোপসাগরের নোয়াখালীর সুবর্ণচর মোহনা হয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। সুবর্ণচরের কাটাখাল থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ট্রলারে করে স্বর্ণদ্বীপ আসার পথে ট্রলারের মাঝি আজাদ মিয়া ও লস্কর আবুল হাশেম জানান, আনুমানিক ২০/২৫ বছর আগে আজকের স্বর্ণদ্বীপ এলাকায় একটি জাহাজ চরে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ওই সময় থেকে এ চরটিকে জাহাইজ্জার চর নামেই মানুষ চিনত। নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ার দুর্ধর্ষ ডাকাত ও জলদস্যুরা ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে এই চরে আত্মগোপন করত। তারা সাগরপথে যাতায়াতকারী জাহাজের মালামাল লুটপাটসহ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নিরীহ মানুষজন, জেলে ও নারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। জাহাইজ্জার চর কেন্দ্রিক এই সন্ত্রাসে উপকূলবাসী ছিল দিশেহারা। প্রায় ৭ বছর আগে র্যাবের অভিযানে জাহাইজ্জার চরের ‘ত্রাস’ বাশার মাঝি নিহত হয়। পরে সেনাবাহিনী এ চরে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়। এর পর ব্যবসায়ী ও জেলেরা স্বাভাবিক জীবন-যাপনসহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এতে এসব এলাকার লোকজনের নিরাপত্তা ও জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোরের মেজর মো. তাওহীদ আলী জানান, ২০১৩ সালের ৮ মার্চ সেনাবাহিনী চরটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করে।

স্বর্ণদ্বীপ টাস্কফোর্স সদর দপ্তরের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোরের মেজর আজাদ জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ দ্বীপটিতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। একে দেশের আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক বছর ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৭টি ব্রিগেড গ্রুপ এখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। প্রতি ব্রিগেডে ২ হাজার করে সেনা সদস্য থাকে। সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক ট্রেনিং সুবিধা ও প্রশাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। ৩৭০ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এ দ্বীপটিতে আনুমানিক ৬০ হাজার ঝাউগাছ, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভিয়েতনামের ১৫শ’ সিয়াম নারকেলের চারা ও ১৭শ’ ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে মহিষ, হাঁস, মুরগি, ভেড়া ও বিভিন্ন পশু পালন শুরু হয়েছে। মহিষের দুধের পনিরের কারখানাও স্থাপন হয়েছে। তিনি আরো জানান, সেনা সদরের প্রস্তাবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দ্বীপটি সফরকালে এর নামকরণ ‘জাহাইজ্জার চর’ থেকে স্বর্ণদ্বীপ করা হয়।

আজ পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্বর্ণদ্বীপের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করবেন। এ সময় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং কুমিল্লার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল রাশেদ আমিনসহ সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।