তিস্তাচরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

তিস্তার ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এক সময়ের ধু ধু বালু চর এখন সবুজে ঢেকে গেছে। এ বালু চরে চাষাবাদ হচ্ছে ভুট্টা, কাউন, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বরবটি, মিষ্টি আলু, বাদাম, করলা, বেগুন, পুঁই শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন রবি শস্য। এসব শস্য চাষে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন তিস্তা পাড়ের কৃষক। প্রায় প্রতিটি ফসলের ভালো ফলন হওয়ায় বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন ক্রমাগত বাড়ছে। এতে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমলেও চরগুলোতে চাষাবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ২৩ হেক্টর।

তিস্তাচরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব চরে রবি শস্য চাষে কোমর বেঁধে নেমেছেন কৃষকরা। তাই যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।

কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, ধান, গম চাষ করলে যে লাভ হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয় রবি শস্যে। বিশেষ করে ভুট্টা চাষে বেশ লাভ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত ভুট্টা হয়। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয় বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা। ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব চাষি বেশ লাভবান হবেন।

ডিমলার ঝাড়সিংগশ্বর এলাকার কৃষক মামুন ইসলাম বলেন, আগে তিস্তার চরাঞ্চল পতিত ছিল। অন্য ফসলের আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় এসব জমিতে ফসল ফলানো হয়নি। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চরে নানামুখী রবি শস্য চাষ হচ্ছে। এতে ভালো ফলন এবং দামও পাওয়া যাচ্ছে।

তিস্তাচরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর কিসামতের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে হয় হাটে। ফলে উৎপাদন বেশি হলেও পরিবহনে খরচ বেড়ে যায়।

জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা এলাকার কৃষক বিমল চন্দ্র রায় জানান, গত বছর মিষ্টি কুমড়ার দাম বেশি পাইনি। এবার আশা করছি ভালো দাম পাবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। তিস্তা চরে আবাদ করে নদীপাড়ের মানুষের সংসার চলে। চাষাবাদের জন্য তেমন কোনো জমি নেই। তাই প্রতিবছর নদীতে চর জাগার অপেক্ষায় থাকি।

তিস্তাচরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠা ছোট বড় চর কৃষকদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এসব চরে অনেকেই রবি শস্য চাষ করে জীবিকার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। এক্ষেত্রে চাষীদের বিনামূল্যে সার-বীজ দিয়ে সহায়তাও করা হয়েছে। কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে আগাম জাতের বিভিন্ন চাষবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।

Views: 11