ফ্লাইটের চাপ সামলাতে শাহজালালে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ

#এখন দিনে ১৯০টি ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। এসব ফ্লাইটে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন #তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর ফ্লাইট বাড়বে। ওই টার্মিনাল দিয়ে দিনে যাতায়াত করবে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী #ফ্লাইট চাপ সামাল দিতেই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৯০টি ফ্লাইট অবতরণ-উড্ডয়ন করে। অবকাঠামোগত দুর্বলতার (রানওয়ে) কারণে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়নে হিমশিম খাচ্ছে তারা। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ চাপ আরও বাড়বে। এ বাড়তি চাপ সামাল দিতে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হতে পারে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ।

আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করা হবে। তবে এ টার্মিনালে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু আগামী বছরের শেষ দিকে। তখন শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়নের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে।

বেবিচক সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি সমীক্ষাও করেছে বেবিচক। গত জুলাইয়ে বেবিচক এই সমীক্ষা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেছে। তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রানওয়ে দুটি একে অপরের খুব কাছাকাছি হবে। এতে একই সঙ্গে দুটি ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারবে না। তাই এই রানওয়েটি প্রথমটির সহায়ক হিসেবেই কাজ করবে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরের সীমানায় জায়গা স্বল্পতা রয়েছে, এটি সত্য। তবে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ করলে কোনো এয়ারলাইন্সকে টেক্সিওয়েতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। উড়োজাহাজগুলো দ্বিতীয় রানওয়েতে একেক করে উড্ডয়ের অপেক্ষায় থাকবে। সিগন্যাল পেলে প্রথম রানওয়েতে গিয়ে একটির পর একটি ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে পারবে। আবার জরুরি অবতরণের দরকার হলে দ্বিতীয় রানওয়ে ব্যবহার করা যাবে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরে দুটি হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। যাতে উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত অ্যাপ্রোনের দিকে যেতে পারে এবং পরবর্তী উড়োজাহাজকে রানওয়ে ব্যবহারের জন্য কম সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া এখন আমরা যে দূরত্বে দ্বিতীয় রানওয়েটি নির্মাণ করতে চাচ্ছি, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের বিমানবন্দরে এমন রানওয়ে আছে। তাদের ফ্লাইট ওঠা-নামায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ করার পরও যদি একই সঙ্গে দুটি ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে না পারে, তাহলে এর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়নে জটিলতা কিছু হলেও থাকবে। কারণ, ক্রমান্বয়ে এয়ার ট্র্যাফিক এবং যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রথমটির সহায়ক হিসেবে দ্বিতীয় রানওয়েটি নির্মাণ করা হলে চাপ কিছুটা কমবে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এক হাজার ৯৮১ একর জায়গার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জায়গার এক-তৃতীয়াংশে ১, ২ ও ৩ টার্মিনাল, ডমেস্টিক টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল, বেবিচকের কার্যালয়সহ অন্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি জায়গা রানওয়ের দুই পাশে ফাঁকা। এখন এই বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ থেকে দিনে ৩৩টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৯০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও প্রায় ১২টি এয়ারলাইন্স ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের অনেকেই বেবিচকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া কার্গো ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

তবে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে একই সঙ্গে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন বা অবতরণ করার জন্য দুটি রানওয়ের মাঝে কমপক্ষে ১ হাজার ৩৫ মিটার দূরত্ব থাকা উচিত। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে থেকে প্রস্তাবিত রানওয়ের দূরত্ব ৩৫৯ মিটার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহজালাল বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজগুলোকে ২০-৪০ মিনিট পর্যন্ত ট্যাক্সিওয়েতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হয়। আবার এয়ার ট্রাফিকের কারণে অনেক সময় অবতরণেও দেরি হয়। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারে না। অপারেশনাল খরচও বেড়ে যায়। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ফ্লাইট চলাচল বাড়বে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য নির্ধারিত দূরত্ব মেনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রানওয়ে তৈরি করা জরুরি। যদিও শাহজালালে নতুন রানওয়ে করার জন্য ওই পরিমাণ জায়গা নেই। এখন দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ করা হলেও এটি তার প্রথম রানওয়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

সম্প্রতি বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, অতিরিক্ত সংখ্যক উড়োজাহাজ ও যাত্রী সামলানোর জন্য তাদের কাছে থাকা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে কাজ করছে। তবে পরিকল্পিত নতুন রানওয়ের সুবিধা হলো যখন একটি উড়োজাহাজ অবতরণ করবে, তখন অন্যটি দেরি না করে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। এছাড়া জরুরি কারণে একটি রানওয়ে বন্ধ থাকলে অন্যটি ব্যবহার করা যাবে।