বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

সারা দেশের মতো এবার নীলফামারীতেও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান কেটে ঘরে তোলা। আর কাঙ্ক্ষিত ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি জেলার কৃষকরা। জেলায় ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১ হাজার ৭০০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছিল ৮১ হাজার ৭১০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। তবে বেশি জমিতে ধান আবাদ ও ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

জেলার সদরে ২৩ হাজার ৭০২, সৈয়দপুরে সাত হাজার ৭০০, ডোমারে ১৩ হাজার ২১৫, ডিমলায় ১১ হাজার ২৬০, জলঢাকায় ১৪ হাজার ৬৬৮ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ১৬৫ হেক্টর বোরোর আবাদ হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ২০০ টাকা।

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের বোরো চাষি আশরাফ আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৬৫ শতক (দুই বিঘা পাঁচ শতাংশ) জমিতে ব্রি ধান-২৮ ও ৫৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। বীজতলা, জমি চাষ, রোপণ, সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৩১২ টাকা। জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন ৪১ মণ। প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ২০০ টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হয়েছে ২১ হাজার টাকা।

একই গ্রামের কৃষক আইয়ব আলী বলেন, ‘এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে আরও বেশি ফলন হতো। লাভের পরিমাণটা আরও বাড়তো। সরকার বাজার দর এরকম (১২০০ টাকা) দিলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে আবাদ করবো।’

সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এবার বোরোতে তাক লাগানো ফলন হয়েছে। তিন বিঘায় খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। আর ধান পেয়েছি ৫৪ মণ। প্রতি মণ এক হাজার ৩০০ টাকা করে বিক্রি করে পেয়েছি ৭০ হাজার ২০০ টাকা। এতে আমার লাভ হয়েছে ৩৪ হাজার ২০০ টাকা। বাজারদর এমন থাকলে আগামীতে বোরোর আবাদ বাড়াবো।’

জেলার জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের বালারপুকুর গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার সেচের সুবিধা পেয়ে চার বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবে ইরি আবাদে কিছু ধারদেনা করেছি। তাই কাঁচা ধান বিক্রি করে (সরকারি রেট) খুব একটা লাভ করতে পারিনি। অর্ধেকেরও বেশি জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। বাকি ধান ৩/৪ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা যাবে।’

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, ‘এবার সদরে ২৩ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনে কৃষক খুশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষ বেড়ে যাওয়ায় ফলন বেশি হয়েছে। আশা করি, আবহাওয়া ও বাজারদর অনুকূলে থাকলে কৃষকরা এবার লাভবান হবেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর জমি বেশি চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। এখন পর্যন্ত শতকরা ২০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। আশা করছি, বাজারে ভালো দাম পেলে বিক্রি করে লাভবান হবেন তারা।’