মাগুরায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। গত কয়েক মৌসুমে পেঁয়াজের ভাল দাম পাওয়ায় লাভের আশায় তারা বেশি পেঁয়াজ চাষ করেছেন, যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলনও ভাল হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে কৃষকরা চাষ করছেন ১১ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলানায় ১ হাজার ৬১৪ হেক্টর বেশি। জেলার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে শ্রীপুরে। এ উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সদর উপজেলায় ১ হাজার ২০৫ হেক্টর, শালিখায় ৬৯০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। চাষ করা জমি থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল, লাল তীর কিং, তাহেরপুরী (বারি-১), মেটাল কিং ও লাল তীর কিং হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ চাষ করছেন। পেঁয়াজ চাষ সফল করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সুষম সার ব্যবহার, জমিতে সেচ দেওয়ার পর সেচের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছাড়াও রোগ ও পোকামাকড় দমনে বালাই নাশক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । এ ছাড়া সময়মতো কৃষকরা পেঁয়াজ শেষ করতে পারায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিশেষত লাল তীর কিং ও তাহেরপুরী পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়। এতে কৃষকরা পরবর্তী সময়ে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক কুতুবউদ্দিন জানান, এ বছর তিনি ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল লাল তীর কিং জাতের পেঁয়াজের চাষ করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ পেঁয়াজ চাষে তাকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করায় ভালো ফলন পেয়েছেন। চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৩০০ মণ পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। মৌসুমের শুরুতে উঠানো পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম। বর্তমানে জেলার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে। তবে রমজান মাসের পর আরো ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পাবেন বলে আশা করছেন এ কৃষক।
এলাকার অপর কৃষক মুন্সী ওমর আলী জানান, ২ একর জমিতে লাল তীর কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনিও প্রায় ৩০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
একই উপজেলার কাদিরপাড়া গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, অন্যান্য বছর পেঁয়াজের ভাল দাম দেখে চলতি বছর বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছে। তবে আবাদ ও ফলন বেশি হওয়ায় চলতি বছর পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা ভালোভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে পেরেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি ভালো দামে কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন।