বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে ৪৬ শতাংশ

আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন

সরকারিভাবে বিনিয়োগে শ্লথগতি থাকলেও গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বাংলাদেশে ২০১৫ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৪৬ শতাংশেরও বেশি। মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে এফডিআইর এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান (আঙ্কটাড) প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। আঙ্কটাড

গতকাল রাতে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে আজ বুধবার বিনিয়োগ বোর্ড এটি প্রকাশ করবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কিছুটা বাড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী এফডিআইর পরিমাণ এখনও অনেক কম। এর পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির মাত্র এক শতাংশ। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এফডিআইর পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো প্রয়োজন।

দেশের বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই বলে থাকেন, অবকাঠামোসহ কিছু সমস্যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের চেয়েও কিছুটা কম। গত অর্থবছরে এ অনুপাত ছিল ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গতকাল সমকালকে বলেন, জিডিপির হিসাবে এফডিআইর ভিত্তি ছিল দশমিক ৭ শতাংশ। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্য মনে হচ্ছে। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান কিংবা ভিয়েতনামের তুলনায় দেশে এফডিআইর পরিমাণ এখনও অনেক কম। তিনি বলেন, নানা কারণে দক্ষিণ এশিয়া এখন বিশ্ব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখনই এফডিআই বাড়াতে হবে। তার মতে, সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মানসিকতার অভাবই এ দেশে বিনিয়োগের প্রধান বাধা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরুন প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন; কিন্তু কর্মকর্তারা সে অনুযায়ী কাজ করলেন না। তাহলে বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত হলো না।’ বিনিয়োগ বোর্ডের সক্ষমতার অভাব এবং অবকাঠামো দুর্বলতায় বিনিয়োগ বাড়ছে না বলে মনে করেন তিনি।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এফডিআই ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এফডিআইর ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের মধ্যে কোম্পানির মূলধন হিসেবে এসেছে ৭০ কোটি ডলার। ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার এসেছে কোম্পানির আন্তঃঋণ হিসেবে। বাকি ১১৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বিদ্যমান বিনিয়োগের মুনাফা থেকে পুনঃবিনিয়োগ হয়েছে। পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এর অর্থ এ দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশি উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

জানা গেছে, গত বছর সবচেয়ে বেশি ৮৪ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে শিল্প খাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে ওষুধ শিল্পে। ৩৩ ও ৩১ কোটি ডলারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে যথাক্রমে বীমা, কৃষি ও মৎস্য খাতে। অন্যদিকে দেশওয়ারি সবচেয়ে বেশি ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ কোটি বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। সারাবিশ্বে চীনের বিনিয়োগ বাড়লেও বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান ১১তম। তালিকায় ভারতের স্থান সপ্তম।

স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে নতুন বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আলোচ্য বছরে ভারতের আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪০০ কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা পেয়েছে উগান্ডা। প্রতিবেশী মিয়ানমার পেয়েছে ৩৩৩ কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ ঘোষণা।

বিদেশে বাংলাদেশের বিনিয়োগও বেড়েছে : প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে বিনিয়োগ হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগের বছর ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে বিদেশে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সম্মিলিতভাবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। ভারত থেকেও দেশের বাইরে বিনিয়োগ কমেছে।