চীনের বিশ্বব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে বাংলাদেশ

০ অনুমোদিত মূলধন ৫০ বিলিয়ন ডলার
০ স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চীনের বিশ্বব্যাংকে যোগ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এতে শেয়ার হোল্ডার মেম্বার হিসেবেই থাকছে। তবে কত শেয়ার কেনা হবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি ও জেবিআইসির আদলে আরও একটি বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে চীন। ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে বাংলাদেশকে এর আগে অনুরোধ জানিয়েছে চীন। চীনের এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই উপযোগী এবং প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তবে সুদের হার ও পরিশোধের সময়সহ অন্যান্য শর্ত কি হবে সেটি পরিষ্কার না হলে স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, চীনের ওই ব্যাংকের নাম দেয়া হয়েছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। ব্যাংকটির মূল উদ্দেশ্য হবে সদস্য দেশগুলোকে অবকাঠামো খাতে ঋণ দেয়া। এর অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০ শতাংশ আসবে সদস্য দেশগুলো থেকে। আগামী বছরই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে।
তবে যোগ দেয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, চীন এখনও ফরমাল কোন প্রস্তাব দেয়নি। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, আমরা বলেছি, তোমরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও আমরা যোগ দিচ্ছি এরকম কিছু তাদের জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, চীনের নবগঠিত ব্যাংকে যোগ দিলে এর কোন প্রভাব বিশ্বব্যাংকে পড়বে না। কেননা চীনের এই ব্যাংক সম্পূর্র্ণ আলাদা হবে। এর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কোন সম্পর্ক নেই।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে নতুন ওই ব্যাংকে যোগ দেয়ার বিষয়টি অলিখিতভাবে চীনের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সকে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। তবে এখনও লিখিতভাবে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীন সফরের সময় চীনের নবগঠিত বিশ্বব্যাংকে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এসেছেন। সে প্রেক্ষিতে দেশে ফিরে আলাপ আলোচনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু কত শেয়ার কেনা হবে এ বিষয়টি এখনও আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েকদিন আগেই চীনের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। এই স্বাগত জানানোর কারণটি হচ্ছে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন যেটি আমাদের একার পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের আইডা থেকে বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ঋণ দেয়া হয়, যা ১৮০টি দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই বাংলাদেশের শুধ অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাত বাদ দিয়ে। বিশ্বব্যাংক তো অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে চীনের প্রচুর টাকা আছে সেগুলো যদি রিয়েল সেক্টরে বিনিয়োগ হয় তাহলে আমাদের জন্য অপশন বাড়ল। শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয়, এর বাইরে আরও একটি অপশন যোগ হচ্ছে।
তবে তিনি বলেন, আইডা এখনও সবচেয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেয়। কিন্তু চীনের ব্যাংকের সুদের হার কি হবে, গ্রেস পিরিয়ড কি হবে এবং তাদের ঋণ পেতে কি ধরনের শর্ত থাকবে সেসব বিষয় এখনও জানা যায়নি। সূত্র জানায়, নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে চীন সরকার বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে এআইআইবি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ, সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছে চীন। এই ব্যাংক থেকে মূলত অবকাঠামো খাতেই ঋণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে থাকবে বিদ্যুত ও জ্বালানি, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন্স। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো, কৃষি উন্নয়ন, নগর উন্নয়নেও চীনের ব্যাংকটি ঋণ দেবে। এআইআইবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারবে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এর বাইরের অন্য কোন দেশ তা হতে পারবে না।
এআইআইবি কাঠামো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে থাকবে বোর্ড অব গবর্নস। এরপর থাকবে বোর্ড অব ডিরেক্টর্স। তৃতীয় ধাপে থাকবে ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা। বোর্ড অব ডিরেক্টর্সে যাঁরা সদস্য থাকবেন তাঁরা হবেন অনাবাসিক। এই কমিটি বছরে চারবার বৈঠকে বসবে। এই কমিটির কাজ হবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনার কর্মকা- মনিটরিং এবং কৌশলগত নির্দেশনা দেয়া। ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের চেয়ারম্যান হতে পারবেন। পাশাপাশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রেসিডেন্ট।
চীনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র মূল্যায়ন ইউনিট (আইইইউ) থাকবে। ওই ইউনিট নির্ধারণ করবে কে হবে ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট।এআইআইবি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একটি ট্রাস্ট ফান্ডও গঠন করা হবে বলেও ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। যারা এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার পরপরই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে ওই ব্যাংকের সদস্য হতে চীন থেকে প্রাথমিকভাবে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেখানে ব্যাংকের কাঠামো কিভাবে গঠিত হবে তারও একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের প্রধান পদের নাম হবে প্রেসিডেন্ট। আর ব্যাংকের সব ক্ষমতা থাকবে বোর্ড অব গবর্নর্সের কাছে। এই কমিটি যে কোন দেশের সদস্য পদ বাতিল করতে পারবে। এ ছাড়া কোন দেশকে ঋণ দেয়ার প্রস্তাবও পাস করবে এই কমিটি। একই সঙ্গে যত ধরনের নীতিমালা করা হবে তা এই বোর্ড অব গবর্নর্স তৈরি করবে। সূত্র