বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প ॥ বাস্তবায়নে রেকর্ড ০ ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ০ গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ৯৬ শতাংশ

বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প ॥ বাস্তবায়নে রেকর্ড
০ ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ 
০ গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ৯৬ শতাংশ
 
হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে সদস্য সমাপ্ত অর্থবছরে। গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৯৬ শতাংশ। গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে সর্বশেষ ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল এডিপি। অন্যদিকে এযাবতকালের সর্বোচ্চ অর্থব্যয়ের রেকর্ডও হয়েছে গত অর্থবছরেই। এ সময় ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ২৬ কোটি টাকা। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর এই অঙ্কই হচ্ছে সব চেয়ে বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। 
আইএমইডি সূত্র জানায়, জুন মাসে শেষ হওয়া গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, যা মোট সরকারী অংশের ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৬ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দের ৯১ শতাংশ। 
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার যেহেতু প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং আমরা সে লক্ষ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি সেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়ায় বাস্তবায়ন হার বেড়েছে। তবে আগামীতে শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সবার আগে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে- যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে আসে সেগুলোর পিছিয়ে থাকার কারণগুলো স্পষ্ট জানা দরকার। তারপরই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে থাকলে চলবে না। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। 
গত তিন অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১১-১২ এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছিল ৯৩ শতাংশ। সেসময় ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৩৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ শতাংশ, সে সময় ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৩২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৯১ শতাংশ, সে সময় মোট ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। 
সদস্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১২-১৩) এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা দশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে আইন ও সংসদ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩০৪ শতাংশ, এ বিভাগের অনুকূলে মোট বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৪ লাখ টাকা, এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ১২৯ শতাংশ, এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ২৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ১২৪ শতাংশ, এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরাদ্দ ছিল ১২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১৫৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১১৭ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩৩০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের হার ১১০ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ২০২ কোটি ১২ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ২২৩ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের বাস্তবায়নের হার ১০৭ শতাংশ। এ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৯৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৩ কোটি ২৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা। আইন ও বিচার বিভাগের বাস্তবায়নের হার ১০৪ শতাংশ। এ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১১৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের হার ১০৪ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বিদ্যুত বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১০৪ শতাংশ। এ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৫৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছিল ৮ হাজার ৮৬৪ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের হার ১০৩ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১৫৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। 
অন্যদিকে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাত্র ১০ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২২ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪৭ শতাংশ, সংসদ সচিবালয় ৬১ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৬৩ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৬৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বছরের শুরুতে ৫৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে সরকারের তহবিল থেকে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে সংশোধন করে সংশোধিত এডিপির আকার হচ্ছে মোট ৫৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদিত হয় ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। কেননা এনইসির পর প্রথমবারের মতো সংশোধিত এডিপিতে যোগ করা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়িত ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার ১০৫টি উন্নয়ন প্রকল্প।