রফতানি খাতে হাইব্রিড ধানের বীজ

বাংলাদেশ হাইব্রিড ধানের বীজ উত্পাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এই সফলতা উল্লেখ করার মতো। এই সাফল্যে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই বীজ আমদানিনির্ভরতা কমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। একই সঙ্গে উত্পাদনও বেড়েছে চাহিদার দ্বিগুণ। এই ক্ষেত্রে চাহিদার অতিরিক্ত বীজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। কিন্তু উত্পাদিত বীজ নষ্টের আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। তাই তড়িঘড়ি করে হাইব্রিড ধানের বীজ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বিশ্বের ধান উত্পাদনকারী চার দেশে এই বীজ রফতানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। দৈনিক বর্তমানে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, চলতি বছর দেশে হাইব্রিড বীজের মজুদ প্রায় ১৩ হাজার টন। মজুদের বিপরীতে বীজের চাহিদা মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টন। অতিরিক্ত মজুদ থেকে চলতি বোরো মৌসুমে তিন হাজার টন বীজ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ টন বীজ রফতানির অনুমতিও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ধান উত্পাদনকারী ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতে এসব বীজ রফতানি করার সুযোগ মিলেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। আর রফতানির সুযোগ পেয়েছে বীজ উত্পাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লাল তীর সিডস, ইস্পাহানি অ্যাগ্রো লিমিটেড ও তিনপাতা কোয়ালিটি সিডস। রফতানির অনুমতি পাওয়া চার প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বীজের মজুদ রয়েছে ব্র্যাক, সুপ্রিম সিড, এসিআই, গেটকো, আফতাব, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, ইউনাইটেড, পারটেক্স সিডস কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির কাছে। এই সংবাদটি এমন এক সময় পাওয়া গেল যখন দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুঃসময়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন অস্থিরতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন আলোচ্য সংবাদটি সত্যিই আশা জাগানিয়া।
টানা পঞ্চমবারের মতো দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চলতি বছরও উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর এক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক ভূমিকা রেখেছে উচ্চফলনশীল বীজ। জানা গেছে, লবণাক্ত ও বন্যার পানি সহিষ্ণু ১২টি জাতের উচ্চফলনশীল ধানের বীজ উদ্ভাবন করা হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ উত্পাদনে প্রতিনিয়ত গবেষণা ও বিনিয়োগ করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। এখন দেশের চাহিদা পূরণ করে বীজ রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে ব্রি-১৬ জাতের উচ্চফলনশীল ধান বীজ মরিসাসে রফতানিও করা হয়েছিল।
সরকার সীমিত আকারে বীজ রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। এর পরিধি আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। একথা সত্য যে, বাংলাদেশে বীজ উত্পাদন খরচ অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। তাই বাংলাদেশের বীজ বিশ্ববাজারের নজর কাড়বে। তাই এক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সহায়তা জরুরি।