এনবিআরের নজরদারি পেঁয়াজের বাজারে

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধে নজরদারি শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা সেজন্য গত ৬ মাসের আমদানি তথ্য খতিয়ে দেখবে রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দারা। কোনো ধরনের কারসাজি প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নতুন করে পেঁয়াজের বাজার যাতে অশান্ত না হয়, তার জন্য এনবিআরের এই উদ্যোগ।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত দপ্তর থেকে বেনাপোলসহ সীমান্তবর্তী পাঁচটি শুল্ক বন্দরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এ বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৬ মাসে এসব শুল্কবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তথ্য পাঠানোর জন্য প্রত্যেক শুল্কবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুল্কবন্দরগুলো হচ্ছে : সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী। প্রধানত ভারত থেকে এসব শুল্কবন্দর দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
সূত্র জানায়, গত ৬ মাসে দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ, আমদানিকারকের নাম এবং কত দামে আমদানি করা হয়েছেসহ বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করবে এনবিআর। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সমকালকে বলেন_ অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলছে। বিষয়টি নজরদারি করতে বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন থেকে গত ৬ মাসের পেঁয়াজ আমদানির তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শুল্কবন্দরগুলো থেকে তথ্য পাওয়ার পর তা যাচাই করা হবে। এর পর জানা যাবে কারা মজুদ করে বাজার অস্থিতিশীল করছে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে মজুদদারিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। কোনো ধরনের সংকট নেই। ফলে দাম কমে আসছে। স্থলবন্দরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে দাম বৃদ্ধির কারণে সে দেশ থেকে আমদানির জন্য আগের তুলনায় এলসি খোলা কমে গেছে। বর্তমানে ভারত থেকে খুব কম পেঁয়াজই আসছে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারতের বিকল্প পাকিস্তান, মিয়ানমার, মিসর প্রভৃতি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ টন। এর মধ্যে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন আমদানি করতে হয়। আমদানি করা পেঁয়াজের বেশিরভাগই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। কোরবানি ঈদে পেঁয়াজের চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ককর দিতে হয় না। ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ আনা হয়। সেখানে বন্যা হওয়ায় ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন এবার ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সে দেশের সরকার নূ্যনতম রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য রফতানি নিরুৎসাহিত করা। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারতের পরিস্থিতিকে দায়ী মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
উত্তরাঞ্চলে সমকালের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে প্রতিদিন সোনামসজিদ শুল্কবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক পেঁয়াজ আসত। তিনি জানান, এখন যে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে তাতে প্রতিটন পেঁয়াজে খরচ হচ্ছে ৭০০ ডলারের বেশি। দুই মাস আগে এটা ছিল ২৫০ ডলার। হিলি শুল্কবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, এই বন্দর দিয়ে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ আসছে। আগে আরও অনেক বেশি আসত। দেশের বৃহত্তম শুল্কবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আসছে। শ্যামবাজারের আড়তদার হাফিজুর রহমান বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। আমদানিও বাড়ছে। সরবরাহে সমস্যা নেই। ফলে দাম আগের চেয়ে কমে আসছে বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।