এমডিজি অর্জনে সাফল্য ॥ বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চায় জাতিসংঘ

দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে সাফল্যের কারণে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। এজন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের মডেল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চায় জাতিসংঘ। এই লক্ষ্যে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের অধীন তিনটি সংস্থা হতে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য, শান্তিরক্ষী মিশন ও জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হবে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের কাছে এখন বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমডিজি অর্জনেও সফল হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর মানব উন্নয়ন সূচকে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সে কারণে জাতিসংঘের এসব ফোরাম হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সাফল্য দেখিয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ এমডিজি পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হওয়ার পরও গত ৪০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, গড় আয়ু বেড়েছে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ‘ই-স্বাস্থ্য’ সেবা চালু করায় সরকারের জাতিসংঘের ‘সাউথ সাউথ’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থার অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের এখন প্রায় ৮ হাজার ৭শ’ সদস্য রয়েছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গোতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা খুবই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ যে কোন পরিস্থিতিতেই এখান থেকে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘে সেনা সদস্য পাঠাতে সক্ষম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বিভাগের মহাসচিব হার্ভে লাডসুস বাংলাদেশ সফর করেছেন। সফরকালে তিনি গত কয়েক দশক ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকা, কর্ম দক্ষতা ও পেশাগত আচরণের গভীর প্রশংসাও করেন।
জানা গেছে, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন হবে। এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ এই জলবায়ু অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরা হবে। জলবায়ু অধিবেশন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কৌশলপত্র প্রণয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রকার ধান উদ্ভাবন, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা রোধে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হবে।
জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশে গরিব মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনা, জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন, নারীর ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও এমডিজি অর্জনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বল্পোন্নত দেশের সমস্যা, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব, ইরাক ও ফিলিস্তিন সঙ্কটের মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এমডিজির সাতটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সাফল্য এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে রয়েছে। আগামী ২০১৫ সালের আগেই এমডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায় বর্তমান সরকার। উন্নয়ন অগ্রগতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০১০ সালে শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সাফল্য অর্জন করায় জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার পেয়েছে। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য খাতে গুণগত মান উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, জাতিসংঘের আফ্রিকা-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ পুরস্কার প্রদান করে।