প্রতিবন্ধীদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে পিপুলশন স্কুল

স্কুলে আসার আগে একরকম ঘরবন্দি অবস্থায় থাকত ওরা। সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা ওদের সঙ্গে মিশত না। কিন্তু স্কুলে আসার পর থেকেই ওদের জীবন পাল্টে যেতে থাকে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে ওরা। প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন চলনবিলের দুর্গম পল্লী এলাকার অভিভাবকরা। প্রতিবন্ধীদের সমাজের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা লাভ করে পিপুলশন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম স্কুল। এ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চলনবিল এলাকার প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করতে যিনি মূল ভূমিকা রাখেন, তিনি হলেন এলাকার সমাজসেবক আবু বক্কর সিদ্দীক। আর্থিক অনুদানসহ সহযোগিতার হাত বাড়ান স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বর্তমান সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া সহযোগিতার হাত বাড়ান শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবিব রুবেল, সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম মামুন ও আলহাজ জালাল উদ্দিন। স্কুলের জন্য ১৬ শতক জমি দান করেন প্রতিষ্ঠাতা আবু বক্কর সিদ্দীক এবং আলহাজ জালাল উদ্দিন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ জানান, বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য কমিটি রয়েছে। বুুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন ক্লাস নেয়া হয়। তাদের যাতায়াতের জন্য স্কুলের ভ্যান ও অটোরিকশা রয়েছে। বয়স অনুুযায়ী মা ও শিশু শ্রেণী, শিশু শ্রেণী, বিশেষ শিশু শ্রেণী এবং বৃত্তিমূলক পৃথক পৃথক ক্লাস রয়েছে। শিক্ষকরা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, গান-বাজনারও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, পিপুলশন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুলটি প্রতিবন্ধীদের মাঝে যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে; সেটা যেন গোটা উপজেলার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েÑ এটাই সবার কাম্য। আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে এ স্কুলটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০০ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এ স্কুলে পাঠ নিচ্ছে। শারীরিক, দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি এবং অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীরা দূরদূরান্ত থেকে এসে এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। শুধু শিশুরা নয়, বয়স্ক প্রতিবন্ধীরাও শিক্ষার আলো গ্রহণ করছেন। সরেজমিন বিদ্যালয়ে দেখা যায়, চার কক্ষের একটি টিনের চাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি ঘর। তিন কক্ষে চলছে ক্লাস। একটি কক্ষ শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীরা জানায়, এ বিদ্যালয়ে পড়তে পেরে তাদের ভালো লাগছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবু বক্কর সিদ্দীক জানান, আশপাশের কোথাও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ছিল না। এ এলাকার প্রতিবন্ধীরা দিনের পর দিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। ২০১৫ সালে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে রয়েছে নানা সমস্যা। সরকার একটু দৃষ্টি দিলে বিদ্যালয়টি দ্রুত এগিয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতিবন্ধীরা এ বিদ্যালয়ে এসে লেখাপড়া করছে। তাদের অটোবাইকে করে অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। সরকারি উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তারা আরও সুবিধা পাবে। তাদের বেড়ে ওঠা অনেক সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।