বিমানবন্দর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এক্সপ্রেসওয়ে

প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগস্থল আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ৩৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদন পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিস্তারিত সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেন। এ সময় মন্ত্রী জানান, সভায় মোট পাঁচটি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব প্রকল্পে ১২ হাজার ৪০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেয়া হবে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে অবশিষ্ট ২২ হাজার ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া, বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। এ বিষয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ ২১ হাজার টাকা। এ কাজে চীন সরকারের কাছ থেকে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার ও ধামরাই উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের সদর, গজারিয়া, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলা, মানিকগঞ্জের সদর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর, হরিরামপুর, সিঙ্গাইর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার উপজেলা প্রকল্পের আওতাভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সহজে এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতের সুবিধা বাড়বে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি। প্রকল্পটির আওতায় ১২৫ দশমিক ৬২ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ২৭০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক ও ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে ২৯৬ দশমিক ৩১ কিলোমিটার রাস্তা পুনর্বাসন ও মেরামত করা হবে। গ্রাম সড়কে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৫ হাজার ২৩৯ মিটার। তাছাড়া ৬ জেলায় ১২টি গ্রোথ সেন্টার, হাট-বাজার পুনর্বাসন ও নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রী জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা) প্রায় ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ৮টি বিমানবন্দর আছে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের প্রধানতম বিমানবন্দর। বাংলাদেশে প্রায় ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে এবং এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি আছে। বন্দরটির বছরে ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা রয়েছে। দেশের বিমান পরিবহন চাহিদা বিবেচনায় এ বিমানবন্দরটির অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালটির মাধ্যমে আধুনিক পাঁচ স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য চাহিদা বিবেচনায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণ করা হবে।

কুমিল্লা (টমছমব্রিজ)-নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর আওতায় কুমিল্লার টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৯ কিলোমিটার ৩টি আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হবে।