গুগল গ্লাসকে নতুন জীবন দিলো বাংলাদেশ

আমেরিকায় একটি চেম্বারে রোগী-ডাক্তার মুখোমুখি বসা। ডাক্তার রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন। রোগী উত্তর দিচ্ছেন। রোগী ভাবছেন ডাক্তার চশমার ভেতর দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। অথচ ডাক্তারের চোখ চশমার কাচে। এদিকে রোগী ও ডাক্তারের কথা ঢাকায় বসে শুনছেন একজন। তিনি দুই জনের কথোপকথন শুনে ঝটপট তা লিখে ফেলছেন। আর ডাক্তারও দেখছেন যা লেখা হলো, তার সবই ঠিক আছে। পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হচ্ছে গুগল গ্লাসের মাধ্যমে।

ডাক্তার গুগল গ্লাসের মাধ্যমে চোখের সামনে চশমার বিশেষ পর্দায় যে সবকিছু রিয়েল টাইমে (তাৎক্ষণিক) দেখতে পেরেছেন, সেই ইন্টারফেসটি তৈরি হয়েছে ঢাকায়। অগমেডিক্স বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গুগল গ্লাসের ইন্টারফেসসহ সব ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপলিকেশন তৈরি করে দিয়েছে।

জানা গেছে, ডাক্তার যে সময়ে (আমেরিকান সময়ে) রোগী দেখেন, একই সময়ে ঢাকায় গুগলের পার্টনার অগমেডিক্সের স্ক্রাইব (তথ্য লিপিবদ্ধকারী) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, নোট, রোগীর ইতিহাস ইত্যাদি সব তথ্য সঙ্গে-সঙ্গে লিখে ফেলেন। একই সময়ে রোগীর সামনে থাকে একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। এর মাধ্যমে স্ক্রাইবের কাছে চলে আসে রোগীর সব তথ্য। স্ক্রাইবের সামনে থাকে দু’টি কম্পিউটার মনিটর। তিনি সঙ্গে-সঙ্গে কাজটি করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ডাক্তারকে। ডাক্তারও তাৎক্ষণিকভাবে তথ্যগুলো দেখে নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগমেডিক্সের ঢাকা অফিস যে ইন্টারফেস, সফটওয়্যার অ্যাপলিকেশন তৈরি করেছে তা বাংলাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, ভারত, শ্রীলংকা ও ডমিনিকান রিপাবলিকের স্ক্রাইবরা ব্যবহার করে সেবা দিয়ে থাকেন।

অগমেডিক্স বাংলাদেশের পার্টনার পারফরম্যান্স ম্যানেজার আরমিনা হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অগমেডিক্স বাংলাদেশ গুগলের পার্টনার। আমরা শুধু গুগল থেকে হার্ডওয়্যার (গ্লাস) নিয়ে ডাক্তারদের ব্যবহার উপযোগী করে তুলি। এজন্য আমরা আমাদের ডেভেলপ (উন্নয়ন) করা সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছি।’

আরমিনা হক আরও জানান, ‘প্রাথমিকভাবে এই সেবা নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তাররা। যে দেশগুলো রোগীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক তথ্য অনলাইনে স্টোর করছে, সেসব দেশও অগমেডিক্সের এই প্রযুক্তি সেবা নিতে এগিয়ে আসবে। অনেক দেশ আছে, যেখানে ডাক্তাররা রোগীর স্বাস্থ্যবিষয়ক যাবতীয় তথ্য অনলাইনে ইলেকক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ডে স্টোর করে রাখছেন, তারপরেও তাদের এগুলো খুঁজে বের করতে প্রচুর সময় বের করতে হয়। গুগল গ্লাস ব্যবহার করলে একজন ডাক্তারের দিনে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা সময় বেঁচে যায়। এ সময় তিনি অন্য রোগী দেখতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন হলো রেকর্ড দেখে, শুনে তা লেখা এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বা কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। আর গুগল গ্লাসের মাধ্যমে আমরা যা করছি, তা রিয়েল টাইমে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডাক্তার যে সময় রোগী দেখছেন সেই সময়ের সঙ্গে মিল করে আমাদের স্ক্রাইবরা ঢাকা অফিসে বসছেন। ফলে সময়ের কোনও হেরফের হচ্ছে না।’

আরমিনা আরও জানালেন, আমেরিকায় ডাক্তারদের লিগ্যালি রিক্যয়ারমেন্টস হলো, ডাক্তারদের সব তথ্য ইলেক্ট্রনিক্যালি সংরক্ষণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজারের বেশি ডাক্তার এই সেবাটি নিচ্ছেন, যা দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও ডমিনিকান রিপাবলিকের স্ক্রাইবরা।

অগমেডিক্স বাংলাদেশের অফিসে বর্তমানে ১২ জন স্ক্রাইব কাজ করছেন। ৩২ জনের প্রশিক্ষণ প্রায় শেষের দিকে। ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী এখন ভাষা (যুক্তরাষ্ট্রের একসেন্টে ইংরেজি) শিখছেন। আরও ২০ জনকে বাছাই করে রাখা হয়েছে প্রশিক্ষণের জন্য।

আরমিনা হকের আশাবাদ, এ পেশায় এলে তরুণরা খুবই ভালো করবেন। তারা বসবেন ঢাকা অফিসে কিন্তু কাজ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রতিষ্ঠানের হয়ে। কাজের পরিবেশ যুক্তরাষ্ট্রের মানেই হবে। তবে এ কাজের জন্য যোগ্য ও দক্ষ জনবলের খুবই অভাব রয়েছে বলে তিনি জানান। কেউ ইংরেজি বিশেষ করে বলা, লেখা ও শোনায় (ব্যাকরণসহ বোঝা) দক্ষ হলেই আমরা তাদের আমাদের টিমে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানাই। সেই সঙ্গে মেডিক্যাল টার্মটা যদি কারও জানা থাকে, তাহলে তা হবে তার বাড়তি যোগ্যতা। তিনি বলেন, তাদের যে ১২ জন স্ক্রাইব রয়েছেন তাদের ৯ জনই নারী। নারীরা এ কাজে বেশ ভালো করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

চিকিৎসাসেবায় আমূল পরিবর্তন আনা অগমেডিস্ক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইয়ান শাকিল ও পেলু ট্র্যান। এই প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পেয়েছে। সম্প্রতি আরও ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

গুগল গ্লাস হলো বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের তৈরি গ্লাস বা স্মার্ট চশমা। গুগল বলছে, এটা তাদের ওয়্যারেবল টেকনোলজি। এটা চোখে পরলে বাইরের দৃশ্যতো দেখা যায়ই, বাড়তি দেখা যায় প্রযুক্তি পর্দা। সেই পর্দায় ফুটে ওঠে বিভিন্ন তথ্য, ছবি, গ্রাফ ইত্যাদি। স্মার্ট চশমাটি যুক্ত থাকে ইন্টারনেটের সঙ্গে। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত থাকে ক্লাউডের সঙ্গে। ফলে ক্লাউড থেকে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে স্মার্ট চশমাটি তার ব্যবহারকারীর চোখের সামনে তুলে ধরে তথ্যের ভাণ্ডার। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে, সেটি তৈরি করছে বাংলাদেশেরই এই অগমেডিক্স বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে https://www.augmedix.com.bd/ এই ওয়েব ঠিকানায়।