হানিফের ব্লাইন্ডসাইট বাংলা ওসিআর

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়েই সবাইকে উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে চমকে দিয়েছেন হানিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের শুরুর দিকে বানিয়ে ফেলেন ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত অটোমেশন ডিভাইস, যা দিয়ে এন্ড্রোয়েড মোবাইলের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৬টি ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস। একই বছরের শেষের দিকে একটি কম্পিউটার মাউস বানিয়ে ফেলেন, যার সুবিধা হলো—যা কোনো সমতল পৃষ্ঠ ছাড়াই কম্পিউটারকে ১০-১৫ ফিট দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আর তৃতীয় চমক ছিল, মাত্র ৫০০-৭০০ টাকায় নরমাল কম্পিউটারকে টাচস্ক্রিন কম্পিউটারে রূপান্তর করা। ল্যাপটাচ নামক ইমেজপ্রসেসিং একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজেই ল্যাপটপ অথবা ডেক্সটপকে টাচস্ক্রিনে রূপান্তর করা যায়। এই আবিষ্কারের কারণে নানা পুরস্কার ও বেশ সুনাম অর্জন করে হানিফ।

 

হানিফের সাম্প্রতিক আরও একটি আবিষ্কার বেশ চমকে দেওয়ার মতো। ‘হানিফ ব্লাইন্ডসাইট বাংলা ওসিআর’ একটি ইমেজ প্রসেসিং কম্পিউটার সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে যেকোনো বাংলা প্রিন্ট লেখা বা মোবাইলের মাধ্যমে তোলা প্রিন্ট লেখাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক্সটে রূপান্তর করা যায় এবং চাইলে তা কম্পিউটারে পরিবর্তন করা যায়। শুধু লেখাকে প্রিন্টে রূপান্তর করা নয়, এই সফটওয়্যারটি লেখাটিকে পড়ে শোনাবে। যা অন্ধ কিংবা বয়স্ক ব্যক্তিদের, অর্থাত্ যারা চোখে কম দেখে তাদের উপকার করবে। আর এই কারণেই হানিফ সফটওয়্যারটির নাম দিয়েছে Blindsight Bangla OCR । সফটওয়্যারটি যেন শুদ্ধ ফলাফল দিতে পারে সেজন্য এটিকে বাংলা ব্যাকরণ শেখানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলা অভিধানের কয়েক হাজার শব্দ যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান হানিফ। ফলে লেখায় কোনো ভুল থাকলেও সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধনের মাধ্যমে নির্ভুল টেক্সট পড়ে শোনায়। সফটওয়্যারটির মোবাইল ভার্সন নিয়েও তিনি কাজ করছেন, কম্পিউটারের পাশাপাশি এই সফটওয়্যার মোবাইলেও একই সুবিধা দিতে পারবে বলে আশাবাদী তরুণ এই আবিষ্কারক। দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে পাস করে নটরডেম কলেজে পড়েছেন হানিফ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে যথাক্রমে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেছেন। এরপর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে তড়িত্ ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। হানিফের বাবা অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ্ সেলিম ও মা মোছা. সেলিনা বানু দিনাজপুর জেলা শহরে কালিতলায় বাস করছেন। নিজের সব সাফল্যের পিছনে বাবা-মাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে পান বলে জানান হানিফ।