জলবায়ু আলোচনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ

মরক্কোর মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলনে এবার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি কার্যকর ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশের সমঝোতাকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিচ্ছেন। শিল্পোন্নত দেশগুলোও প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ৮৩ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ইতোমধ্যে সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন। গতকাল প্ল্যানারি অধিবেশন উদ্বোধন করেন মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ। স্থানীয় সময় দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বিকালে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরছি। এটি একটি বৈশ্বিক সমঝোতা। এখানে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। মরক্কো সমঝোতার পথে এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে এবারের সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির রূপরেখা বাস্তবায়ন, সবুজ জলবায়ু তহবিলে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সমঝোতায় পৌঁছাতে শেখ হাসিনার বিশেষ ভূমিকা আশা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ হাসান ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনসহ প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে সমঝোতায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বল্পোন্নত ও শিল্পোন্নত কয়েকটি দেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করে জি-৭৭ চায়না, দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোটগুলো এক হয়ে সবুজ তহবিলে দ্রুত অর্থ দাবি করেছে।
এর আগে ২০০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার প্রস্তাব দেন, যা প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নড়বড়ে
যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই জলবায়ু তহবিল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তারা জলবায়ু চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারে— এমন গুজবও চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে পরিবেশবাদীরা গতকালও বিক্ষোভ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র জিসিএফ তহবিলে তিন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা কোনো অর্থ দেবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনে অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে সব কিছুই পূরণ হয় না। তিনি ট্রাম্পকে বৈশ্বিক উষ্ণতারোধে জলবায়ু চুক্তিকে মেনে নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্যারিস চুক্তিকে বিশ্বের ১১০টি দেশ অনুমোদন দিয়েছে। এককভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও ইতোমধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ফলে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ কম।
এদিকে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল, ভারত, জাপান ও তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই বৈশ্বিক আইনি বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। কারণ বিশ্বের বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল দিনভর আলোচনায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট অ্যানেক্স-১, উদীয়মান অর্থনীতির জোট বেসিক ও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোট এলডিসি, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট এওসিস ও আফ্রিকান ইউনিয়ন গ্রিন ফান্ডে অর্থায়ন নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছলেও তারা মধ্য মেয়াদে তহবিলে অর্থের পরিমাণ ও কোন কোন দেশ কী পরিমাণ অর্থ দেবে তা চূড়ান্ত করতে চাচ্ছে না। জাপান, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেসরকারি খাত থেকে গ্রিন ফান্ডের অর্থায়নের কথা বলেছে। তারা সবুজ নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।