বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দিকে চীনের দৃষ্টি!

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। এক দশক আগেও এর বাইরে খুব বড় বাজার ছিল না বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মালিকদের। কিন্তু তৈরি পোশাকের নতুন গন্তব্য হিসেবে বেশ লক্ষণীয় হয়ে উঠছে চীনের বাজার।

চীনের ব্যবসায়ীরা যেমন বাংলাদেশের পোশাক কিনতে এগিয়ে আসছেন, তেমনি কারখানার মালিকেরাও বাংলাদেশে কারখানা তৈরিতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। চীনে এখন পোশাকশ্রমিকদের বেতন অনেক বেড়েছে। পরিবেশদূষণ কমাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে গিয়ে উত্পাদন খরচও বেড়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমিকদের বেতন অনেক কম, অন্যান্য বিধিনিষেধও বেশ আলগা। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পেরে উঠতে পরিমরি করে বাংলাদেশের দিকে ছুটছেন চীনের উদ্যোক্তারা। বিবিসি অনলাইনে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খুব কম উত্পাদন খরচের কারণেই বাংলাদেশের আসছেন চীনা উদ্যোক্তারা। প্রতিবেদনে চীনের ফোর সিজনস ফ্যাশন লিমিটিডের স্বত্ব্বাধিকারী রোজা দাদাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, চীনে মজুরি বৃদ্ধি ও অন্যান্য উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোজা চীনের নিংবো নগরে প্রায় দুই দশক ধরে একটি পোশাক কারখানা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ওখানে প্রত্যেক শ্রমিকের মাসিক মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার। কিন্তু, বাংলাদেশে তা গড়ে ৭০ থেকে ১০০ ডলার। আমি যদি এখানে (বাংলাদেশে) উত্পাদন করি, তবে আমার পণ্যের একটি প্রতিযোগিতামূলক দাম ঠিক করতে পারব।’

খবরে বলা হয়, রোজা ইতিমধ্যে ঢাকায় একটি অফিস খুলেছেন। সেখান থেকে তিনি নিজের পণ্যের অর্ডার যেমন দিচ্ছেন, তেমনি চীনা খুচরা ব্যবসায়ীদের অর্ডারও নিচ্ছেন।

চীনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে উত্পাদন করলে তাঁদের পণ্যের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে যাবে।
চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে এসে উত্পাদন কারখানা খুলে বসলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এতে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা প্রতিবেদনে বলা হয়নি। তবে রপ্তানিকারকেরা এখন পর্যন্ত চীনে পোশাক ব্যবসায় যে লাভবান হচ্ছেন, তা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ গার্মেন্ট পণ্য দেশটিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে।

কয়েক বছর আগে চীনে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক কোটি ৯০ লাখ ডলার, কিন্তু এখন তা ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের উত্পাদকেরা আশা করছেন, পরবর্তী পাঁচ বছরে এই আয় ৫০ কোটি ডলার ছাড়াবে।

চীনের সবচেয়ে বড় অনলাইন কাপড় বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাংকল এবং পশ্চিমা ব্র্যান্ড ওশান এবং এইচঅ্যান্ডএমের মতো অনেক নামী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তাদের উত্পাদন শুরু করেছে।

তবে প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্বল অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বকেয়া ও প্রয়োজনীয় বেতনের দাবিতে নিয়মিত শ্রমিক বিক্ষোভও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া শ্রমিকদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।