প্রতিবছর রোজার মাসে বহুল ব্যবহূত কিছু পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় একমাত্র সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এবারও রমজান মাসকে সামনে রেখে সে উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রোজায় চিনি, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা এবং খেজুর-এই পাঁচ পণ্য খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে টিসিবি। এ লক্ষ্যে এসব পণ্য মজুদ শুরু করেছে সংস্থাটি। টিসিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এবার রোজার মাসের জন্য টিসিবি চিনি মজুদ করবে ১ হাজার ৫০০ টন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে এ চিনি সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া আরও বেশি প্রয়োজন পড়লে টিসিবি এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যখন ইচ্ছা চিনি নিতে পারে। বিএসএফআইসির সঙ্গে ঠিক এ ধরনেই চুক্তি রয়েছে টিসিবির। গত প্রায় তিন বছর ধরে এখান থেকেই চিনি কিনছে টিসিবি। প্রাথমিকভাবে এক হাজার টন চিনি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বিএসএফআইসির গুদাম থেকে টিসিবির গুদামে আসবে।
টিসিবি এবারের রোজাকে ঘিরে ৫০০ টন সয়াবিন তেল মজুদ করছে। স্থানীয় বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন সংগ্রহ করে ভোক্তাকে দেওয়া হবে ন্যায্যমূল্যে। সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১২ মে দরপত্র খোলা হবে। জানা গেছে, এবার ভোজ্য তেলের মূল্য কম থাকায় টিসিবি মজুদও করছে কম। কারণ কোনো পণ্যমূল্য কম থাকলে ক্রেতারা সাধারণ বাজার থেকেই বেশি কেনেন। গত বছরও সয়াবিন তেলের দাম ক্রেতার নাগালে ছিল। এ কারণে টিসিবির সরবরাহকৃত ভোজ্য তেল বেশি বিক্রি হয়নি। এ জন্যই সংস্থাটি এবার ভোজ্য তেল মজুদ করছে কম।
তবে এবার মসুর ডালের বাজার বেশ চড়া। বর্তমানে আমদানিকৃত ভালো মানের মসুর ডালের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। রোজা আসার আগে মসুর ডালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে টিসিবি বেশ আগেভাগেই মসুর ডাল মজুদ করেছে। ইতোমধ্যেই টিসিবির গুদামে মসুর ডাল মজুদ রয়েছে ১ হাজার ১০৭ টন। এজন্য আপাতত নতুন করে আর মসুর ডাল কেনা হবে না। তবে চাহিদা বাড়লে এবং মজুদ কমলে তখন আবারও মসুর ডাল সংগ্রহ করা হতে পারে। রমজানের আরেক বহুল প্রচলিত পণ্য ছোলা। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এবার ১ হাজার ৫০০ টন ছোলা মজুদের উদ্যোগ নিয়েছে। এবার অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হচ্ছে উন্নত মানের ছোলা। কানাডাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এই ছোলা সরবরাহ করছে টিসিবিকে। প্রতি কেজি আমদানি মূল্য পড়ছে ৭৪ টাকা। তবে টিসিবি ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করায় খুচরা মূল্য আরও কম হবে। জানা গেছে, দুটি চালানের মাধ্যমে এই দেড় হাজার টন ছোলা দেশে আসবে। ইতোমধ্যে প্রথম চালান জাহাজে উঠেছে এবং আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়বে ছোলাবাহী জাহাজ।
খেজুর দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে সব শেষে খেজুর ক্রয় করবে টিসিবি। আগে কয়েক বছর নিজেরাই সরাসরি আমদানি করে খেজুর বিক্রি করলেও এবার স্থানীয় বাজার থেকে খেজুর সংগ্রহ করা হবে। তবে কত টন খেজুর সংগ্রহ করা হবে সেটি নির্দিষ্ট করা হয়নি। স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যখন যা প্রয়োজন হবে কিনবে টিসিবি। তবে খেজুর ক্রয়ের জন্য কয়েক দফা লোকাল দরপত্র আহ্বান করা হয়, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে কোটেশনের মাধ্যমে খেজুর কেনা হবে বলে জানা গেছে।
টিসিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব পণ্য সংগ্রহ করে রমজানের দিনদশেক আগে থেকে ট্রাকে করে এবং নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে এসব পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছানো হবে। মূলত টিসিবি তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৯৪৯ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। ডিলারের দোকানের পাশাপাশি সারাদেশে ১৭৪টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫, চট্টগ্রামে ১০, বিভাগীয় শহরে ৫ এবং প্রত্যেক জেলা শহরে দুটি করে ট্রাক সেল করা হবে। এর বাইরে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে নিজস্ব ১০টি বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি।
জানা যায়, গত বছর ডিলারপ্রতি ১০০০-১৫০০ কেজি চিনি, ১০০ থেকে ২০০ হাজার কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটারের সয়াবিন ১০০-১০০০ হাজার লিটার, ১ ও ২ লিটারের সয়াবিন ১০০-১০০০ লিটার, ৫০০-৮০০ কেজি ছোলা এবং ৫০ কেজি খেজুর দেওয়া হয়। আর খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে ক্রেতাপ্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৪ কেজি চিনি, ৩ কেজি ছোলা, ৪ কেজি মসুর ডাল এবং ২ কেজি করে খেজুর দেওয়া হয়। গত বছর খোলাবাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হয় ৩৭ টাকা দরে। এছাড়া ৫ লিটারের সয়াবিনের প্রতি লিটারের মূল্য ৮৮ টাকা, ১ ও ২ লিটারের মূল্য ৮৯ টাকা, ছোলা ৫৩ এবং খেজুর ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
সার্বিক বিষয় সম্পর্কে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর সকালের খবরকে বলেন, রোজার মাসে সাধারণত যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি এবং মূল্যও বেশি-মূলত সেসব পণ্য মজুদ করে টিসিবি। এসব পণ্যের মূল্য যাতে ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে না যায়, তার জন্যই টিসিবির এ উদ্যোগ। চাহিদার তুলনায় মজুদ কি কম হচ্ছে না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছা করলেই বেশি পণ্য মজুদ করতে পারি না। কারণ টিসিবির নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পণ্য কিনতে হয়। তারপরও টিসিবি যে পরিমাণে পণ্য মজুদ করে তাতেই রমজান মাসের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।