বিশ্বশান্তিতে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নে অবদান অব্যহত রাখতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন। 

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে প্রথম বাংলাদেশি নারী কূটনৈতিক আমিরা হকের নিযুক্তিতে তার সম্মানে আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এসব কথ‍া বলেছেন। এসময়ে মিসেস বান কি মুনও উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে) এ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বান কি মুন বলেন, “বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা বিশেষ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।” সম্বর্ধনার জবাবে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক বলেছেন, “আজকের সম্বর্ধনার এই শুভ ক্ষণটি বাংলাদেশের সকল নারীদের জন্য সুখবর।”

জাতিসংঘ মহাসচিব গত বছর তার বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত চমৎকার অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ঢাকার রাজেন্দ্রপুরে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা দেখে আমি অভিভূত।বাংলাদেশ সফরে গিয়ে আমি উপলদ্ধি করেছি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কিভাবে বাংলাদেশিরা এত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং কেন দেশে দেশে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর এত সুনাম।”

বান কি মুন আরও বলেন, “বাংলাদশ বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সারাবিশ্বে বর্তমানে বাংলাদেশের ১০ হাজার শান্তিরক্ষী নিয়োজিত। সুদান লেবানন, দারফুরসহ বিশ্বের সংঘাতময় বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশি সদস্যরা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে- যা অত্যন্ত কঠিন কাজ।”

বান কি মুন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পদে নিযুক্ত বাংলাদেশি নারী কূটনৈতিক আমিরা হকের প্রশংসা করে বলেন, “আমিরা হক অত্যন্ত কর্মঠ এবং যে সমস্ত সংঘাতপূর্ণ দেশে মেয়েরা নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত সেসব দেশেও আমিরা হক অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর জাতিসংঘের পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ২০ ভাগ নারী পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমিরা হকের উৎসাহ ও প্রচেষ্ঠা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছ।”

তিনি আরও বলেন, “আমিরা হককে সকল বাংলাদেশির সহযোগিতা করতে হবে।”

সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক প্রথমেই বলেন, “আজকের এই শুভ ক্ষণটি বাংলাদেশের সকল নারীদের জন্যই সুখবর।”

তিনি বলেন, “একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের পি-ওয়ান পদবীর কর্মী থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৩৬ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আজ এ পদে আসীন হয়েছি।”

আমিরা হক তার কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে তাকে এ পদে নির্বাচনের জন্য মহাসচিব বান কি মুনকে এবং তার সহধর্মিনী মিসেস মুনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমাদের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মিসেস মুনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং আমার বিশ্বাস আমার নিয়োগের ক্ষেত্রে মহাসচিবের সিদ্ধান্তে তার উৎসাহ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, “আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা যথাযথভাবে সম্পাদনে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তিনি সব বাংলাদেশিকে অনুরোধ করেন তাকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দানের।

উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতিসংঘের ইকোসকের সভায় যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানরত সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আনোয়ারুল করিম চৌধুরী জয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “জাতিসংঘের মিলিনিয়াম গোল বাস্তবায়নে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বার্ষিক মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও গড় আয়ু বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংরাদেশ এখন একটি আলোচিত নাম।”

তিনি বলেন, “আমিরা হকের জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ বাংলাদেশের সুনামকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।”