গত বছর ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দিয়ে ১৮ লাখ টাকা পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। আগের বছরের তুলনায় গত বছর (২০২৩) প্রায় ১০ হাজার অভিযোগ বেশি পড়েছে। গত বছর অভিযোগ জমা পড়েছে ২৬ হাজার ৬০৫টি। আর এর আগের বছর অভিযোগ জমা পড়ে ১৬ হাজার ৫৪টি। বেশি অভিযোগ আসায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকাও পেয়েছেন বেশি মানুষ। গত বছর অভিযোগ করে ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭৫ টাকা পান ১ হাজার ৩৬ জন। আর তার আগের বছর ১০ লাখ ৩২ হাজার ৫০ টাকা পান ৬০৭ জন।

অভিযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মানুষকে অনেক বেশি সচেতন করছি। মানুষকে বেশি সচেতন করার কারণে অধিদপ্তরে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। বেশি অভিযোগ করার কারণে জরিমানাও বাড়ছে। অনিয়ম যে হঠাৎ বেড়েছে তা নয়, অনিয়ম আগেও ছিল।’

কোন বিষয়ে বেশি অভিযোগ আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্তত ১০০ ধরনের অনিয়মের কথা বলতে পারব। তবে ই-কমার্স বিষয়ে অভিযোগ বেশি।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৪ বছরে অভিযোগ করে ৮ হাজারে বেশি মানুষ প্রতিকারের পাশাপাশি ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বেশি পেয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার অংশ (২৫ শতাংশ) থেকে তাঁদের এই টাকা দেওয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পণ্যের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ আসে। এর বাইরে মোড়কজাত পণ্যে উৎপাদন বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকা, পরিবহনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা না দেওয়া, মানসম্মত পণ্য না পাওয়া এবং অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেউ কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে প্রতারিত হলে তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। পরে তদন্ত বা শুনানি শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হয়। আইন অনুযায়ী জরিমানার টাকার ২৫ শতাংশ পান অভিযোগকারী। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।

ভোক্তা অধিকার সূত্রে জানা গেছে, পণ্য বা সেবা নিয়ে অভিযোগ করে টাকা পাওয়ার পাশাপাশি অভিযোগের সংখ্যাও বেড়েছে। গত তিন বছরে ৫৭ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগ অধিদপ্তরে জমা পড়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৫১৩টি।

গত তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছরই অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৬০৫ এবং নিষ্পত্তি করা হয় ১৯ হাজার ৫৩৮টি। ২০২১-২২ অর্থবছরের অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫৪টি এবং নিষ্পত্তি করা হয় ১১ হাজার ৪৮৭টি এবং ২০২০–২১ অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৯১০ এবং নিষ্পত্তি করা হয় ১৩ হাজার ৪৮৮টি।

এ ছাড়া ২০২২–২৩ অর্থবছরে জরিমানার অংশ থেকে ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭৫ টাকা পান ১ হাজার ৩৬ জন ভুক্তভোগী। ২০২১–২২ অর্থবছরে ৬০৭ জন অভিযোগকারী জরিমানা থেকে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৫০ টাকা পান। আর ২০২০–২১ অর্থবছরে ৬৮৫ জন অভিযোগকারী পান ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৫ টাকা।

অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পণ্য ও সেবা—দুই ধরনের বিষয় নিয়েই বেশি অভিযোগ আসে। পণ্যের ক্ষেত্রে বেশি দাম নেওয়াসংক্রান্ত অভিযোগই বেশি। সেবার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত সেবা না দেওয়ার অভিযোগ।’

অভিযোগ জানানো প্রক্রিয়া
ডাকযোগে, ফোন-ফ্যাক্স, ই-মেইলে বা সরাসরি অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করা যায়। তবে অভিযোগটি লিখিত হতে হবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রসিদ যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া অভিযোগকারীর পূর্ণ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে।

০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে ফোন করে এবং এই ওয়েবসাইটে গিয়ে এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া
অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর অভিযোগকারী এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকবেন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এরপর তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করবেন। নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ওই কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত বা পরীক্ষাগারে পণ্য পরীক্ষার জন্য যেতে পারেন।