পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল শুরু হওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো এবং বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এলাকা। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করছে। পর্যটন সম্ভাবনার বৃহৎ উৎসস্থল হলো পদ্মা সেতু। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলার মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণের অনন্য উদাহরণ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর জেলার জাজিরাসহ দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক যোগসূত্র স্থাপন হবে।
বাংলাদেশে তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে, তন্মধ্যে ষাটগম্বুজ মসজিদ ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এই দুটি হেরিটেজ দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। অতীতে ওই অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পর্যটকদের পছন্দের পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও ভ্রমণে আগ্রহ ছিল কম। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চল ভ্রমণে আগ্রহ বাড়বে।
পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা নিয়ে এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সেতু বাস্তবায়িত হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বছর দারিদ্র্য নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।
দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা বাজার, ঐতিহাসিক দুর্গা সাগর, কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট, খানজাহান আলী সেতু, খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, জাতিসংঘ পার্ক, দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার, রূপসা নদী, শহীদ হাদিস পার্ক, খানজাহান আলী কর্তৃক খননকৃত বড়দিঘি, খুলনা শিপইয়ার্ড, গল্লামারী স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি, জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক, পিঠাভোগ, প্রেম কানন বকুলতলা, মোংলা পোর্ট, রাড়ুলী, রেলস্টেশনের কাছে মিস্টার চার্লির কুঠিবাড়ি, সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক ও অন্য পর্যটন আকর্ষণগুলোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, পায়রা বন্দরকে ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলেছে পদ্মা সেতু। মাত্র ৬ ঘণ্টায় উপরের উল্লেখিত পর্যটন আকর্ষণগুলোতে পর্যটকরা যেতে পারছেন।
অন্যদিকে কুয়াকাটার গা ঘেঁষে অবস্থিত ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার চর, শুঁটকিপল্লি, লালদিয়ার চর, চর বিজয়, ফকিরহাট, সোনার চর, ক্র্যাব আইল্যান্ড বা কম কী? একটি স্পট থেকে আরেকটি স্পট নান্দনিক। এছাড়া রয়েছে ভিন্ন রকম জীববৈচিত্র্যের সমারোহ। দারুণ সময় কাটাতে চাইলে এসব পর্যটন স্পটের জুড়ি পাওয়া কঠিন।
প্রতি বছর পর্যটকবাহী ৪৫টি ক্রুজ ভারতে কুচবিহার-চেন্নাই-গোয়া হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে চলে যায়। তবে এ ক্রুজগুলো যদি পায়রা বন্দরে আকৃষ্ট করা যায় তবে আন্তর্জাতিক পর্যটক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। পদ্মা সেতু গতিশীল করবে মোংলা ও পায়রা বন্দর, যা সুনীল অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল যেমন কুয়াকাটা, মংলা বন্দর ও পায়রা বন্দর কেন্দ্র করে সমুদ্র পর্যটনের সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। নদীভিত্তিক ও সমুদ্রভিত্তিক পর্যটনে সময়োপযোগী সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পাশাপাশি তৈরি করবে কর্মসংস্থান সুযোগ, শক্তিশালী হবে জাতীয় অর্থনীতি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের জন্য পদ্মা সেতু ও দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণগুলো ছোট ছোট প্রমো তৈরি করে ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং করা প্রয়োজন।