রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের নগরী। আর ঢাকার নিকটবর্তী টাঙ্গাইল শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ঐতিহ্যপূর্ণ জেলা।
মোগল, সুলতানী ও জমিদার আমলে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণশৈলী এই জেলাকে করেছে আরও সমৃদ্ধ, ১৬০৮ সালে নির্মিত দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া মসজিদ, সতেরো শতকে নির্মিত পাকুল্লা তিন গম্বুজ জামে মসজিদ, মোগল স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত ধনবাড়ী নবাব মসজিদ, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়ায় ১৯১৭ সালে জমিদার ছমির উদ্দিন চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত সাত গম্বুজ মসজিদ, কালিহাতী উপজেলার বলধি জামে মসজিদসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক মসজিদ আছে এই জেলায়।
সবকিছুকে ছাপিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে সাম্প্রতিককালে নির্মাণাধীন, গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামের ২০১টি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ, দেশ-বিদেশের অসংখ্য মুসলমানসহ বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এই মসজিদের দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক নির্মাণশৈলী।
মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ইতোমধ্যে ছুটে গেছেন একাধিক বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, বাদ যায়নি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত রুশ নাগরিকরাও। প্রতিনিয়ত ঘুরতে আসেন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকও।
ঝিনাই নদীর তীরে, সবুজেঘেরা গ্রামের মনোরম পরিবেশে নির্মিত মসজিদটিতে রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য, ২০১টি গম্বুজে নান্দনিক কারুকার্যখচিত সোনালি রঙের মার্বেল পাথর দিয়ে বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০১টি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ পৃথিবীতে প্রথম নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের ওপর বসানো হয়েছে পিতলে লেখা আল্লাহ শব্দ, মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মিত হচ্ছে ৪৫১ ফুট (৫৭ তলার সমান) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম মিনার, নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে উচ্চতার দিক দিয়ে দিল্লির কুতুব মিনারকেও ছাড়িয়ে যাবে। মসজিদের দেয়ালে বসানো হয়েছে পিতলের ওপর অঙ্কিত ৩০ পারা কোরআন শরিফ, উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সুসজ্জিত অজুখানা। মসজিদের প্রধান দরজা নির্মাণে ৫০ মণ পিতল ব্যবহার করা হয়েছে, দরজা ইলেকট্রিক সুইচ সমৃদ্ধ, দরজার ওপরে পিতলে খচিত রয়েছে আল্লাহর পবিত্র ৯৯টি নাম। রয়েছে নিজস্ব হেলিপ্যাড। মসজিদের পশ্চিম পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচ তলা ভবন, এখানে থাকবে হেফজখানা, বৃদ্ধাশ্রম, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি।
মসজিদের পূর্ব পাশে পাঁচতলা ডাকবাংলো মার্কেটে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন।
মূল মসজিদের দ্বিতল ভবনের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে মসজিদটির উদ্বোধনের লক্ষ্য থাকলেও করোনার ধাক্কায় নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মসজিদে ব্যবহৃত সব মার্বেল পাথর, টাইলস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত, ১২ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতার মসজিদটির দৈর্ঘ্যে ১৪৪ ফুট ও প্রস্থে ১৪৪ ফুট। মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ ও ১৭ ফুট উচ্চতার ২০০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মূল মসজিদের চার কোণায় ১০১ ফুট ৪টি মিনার ও ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার আছে।
মসজিদে ওয়াক্ত নামাজ শুরু না হলেও, শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে সারা দেশের হাজারও মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেক জুমায় আলাদা আলাদা দেশের বিখ্যাত মাওলানা, মুফতিরা ইমামতি করেন।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সব পৈতৃক সম্পত্তি কল্যাণ ট্রাস্টে দান করে দিয়েছি, মাত্র ১৫ লাখ টাকা হাতে নিয়ে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। সবার সহযোগিতায় মসজিদের নির্মাণকাজ এতদূর আনতে সমর্থ হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছেন উদ্বোধনের সময় তিনি উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম সাহেবের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি, উদ্বোধনের সময় তিনিও উপস্থিত থাকবেন।’