ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারার হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা

ভাসমান পেয়ারার হাট ঝালকাঠির ভীমরুলী বাজারে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পেয়ারাচাষী ও ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখর থাকে এ হাট। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলী গ্রামসংলগ্ন কয়েকটি খালের মোহনায় বসে এ ভাসমান পেয়ারার হাট। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পর্যটকরাও আসছেন ভাসমান পেয়ারা হাটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পেয়ারার দাম বেশি পাচ্ছেন এখানকার চাষীরা। তবে চলতি বছর প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কম হওয়ায় হতাশ তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঝালকাঠি, বানারীপাড়া ও স্বরূপকাঠি উপজেলার ৫৫ গ্রামের পেয়ারা বাগান ঘিরে ভীমরুলীর ভাসমান হাট পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বর্তামানে প্রতি মণ পেয়ারার দাম আকার ও রং ভেদে ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভাসমান হাট হিসেবে বিখ্যাত হলেও ভীমরুলী মোকামে পেয়ারাবাহী ডিঙি নৌকার আনাগোনা বিগত বছরগুলোর তুলনা অনেক কম।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।

এখানকার চাষীরা জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এবার অর্ধেকেরও কম ফলন হয়েছে। পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল, এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝরে যায়। তাই পেয়ারার বাজার ভালো হলেও লাভবান হতে পারবেন না চাষীরা।

প্রবীণ পেয়ারাচাষী ভবেন হালদার, নিশিত হালদার, বিধান রায় জানান, আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ। পদ্মা সেতুর কারণে বাজার ভালো হলেও এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপদাহে পেয়ারার ফলন কম হয়েছে। এতে চাষীরা খরচও তুলতে পারবেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।

স্থানীয় চাষীরা জানান, ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ শুরু হয়ে। এ আবাদ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২২ সালে অন্তত ১ হাজার ৯৩২ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টন। কিন্তু এ বছর ফলন কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়।

কৃষক পঙ্কজ বড়াল বলেন, ‘মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। এর পরে কাদা মাটি দিয়ে গোড়া ঢেকে দিয়েছি। এতে প্রতিটি গাছের পরিচর্যায় ৩০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ বছর পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল, বৃষ্টি কম হওয়ায় তা অনেকটাই ঝরে গেছে। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাই ওঠে কিনা তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায়।’

কৃষক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন, ‘পেয়ারা আমাদের মৌসুমি আয়ের একমাত্র অবলম্বন। পেয়ারার ফলন ভালো হলে আমাদের সচ্ছলতা আসে। পানির ওপরেই ভাসমান হাটে বছরে কোটি টাকা লেনদেন হয়।’

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, জেলার সদর উপজেলায় ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। প্রতি মৌসুমে এলাকার মানুষের কাছে পেয়ারা অর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন। তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এবার পেয়ারার ফলন কম হলেও পদ্মা সেতুর কারণে দাম অনেক বেশি পাচ্ছেন চাষীরা। এতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন তারা। এ বছর হেক্টরপ্রতি সাড়ে ১১ থেকে ১২ টন পেয়ারার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ লাখ টাকার পেয়ারা বেচাকেনা হচ্ছে।