দুই মাসে চালুর অপেক্ষায় আরও মেগা প্রকল্প

সরকার তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো চালু করা শুরু করেছে। গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ভোটের আগেই চলতি সেপ্টেম্বর এবং আগামী অক্টোবর মাসেই যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নানা খাতের প্রায় আটটি মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে, যা ধাপে ধাপে খুলে দেবে সরকার।

আগামী দুই মাসের মধ্যে উদ্বোধনের তালিকায় মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে মেট্রোরেল লাইন-৬, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা আন্তদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

মেট্রোরেল

বর্তমানে উত্তরার উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। আর পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী ছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। ২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, শুরুতে সব ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে না। কিছু ট্রেন মতিঝিল যাবে, কিছু আগারগাঁও পর্যন্ত যাবে। ট্রেনের নম্বর থাকবে। সেই নম্বর অনুযায়ী কোন ট্রেন আগারগাঁও পর্যন্ত, কোন ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে, সেটা বলা থাকবে। এটা সাময়িক। যখন দেখা যাবে পুরো সিস্টেম ভালোভাবে চলছে, তখন আমরা আগের অংশের সঙ্গে মার্জ করে দেব। পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। আর পুরোদমে মেট্রোরেল চলবে জানুয়ারি থেকে।

বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন (সফট লঞ্চিং) হবে আগামী ৭ অক্টোবর। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ ৮২ শতাংশ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে।

আংশিকভাবে উদ্বোধন হলেও যাত্রীরা পুরোপুরিভাবে এই তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন না। পুরো নির্মাণকাজ আগামী বছরের শেষ দিকে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা কর্ণফুলী টানেল

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চার লেনবিশিষ্ট দেশের প্রথম এই টানেলে যানবাহন চলাচলের জন্য এখন অপেক্ষা মাত্র। নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় শতভাগ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টানেলের উদ্বোধন হবে আগামী ২৮ অক্টোবর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবরে টানেলটি উদ্বোধন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে উদ্বোধনের পরের দিন থেকে অক্টোবরে টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের একাংশ উদ্বোধনে জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সময় চাওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের আগে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেললাইনে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলভাবে ট্রেন চালানো হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রায়াল রান আগামী ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

প্রকল্পের আগস্ট মাসের অগ্রগতির তথ্য বলছে, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। এদিকে ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে ২০১৬ সালের জুনে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

দোহাজারী-কক্সবাজার

চলতি বছরই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা সরকারের। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারে নির্মাণ করা হয়েছে ঝিনুকের আদলে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান শেষ হবে। তারপর দ্রুতই বহুল কাঙ্ক্ষিত এ রুটে যাত্রী পরিবহন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

সেপ্টেম্বরে এ রেল সংযোগের উদ্বোধনের কথা থাকলেও কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও বান্দরবানের পাহাড়ি ঢলে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ প্রকল্পের উদ্বোধন পিছিয়ে যাচ্ছে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করা হচ্ছে। এরপর খুব দ্রুত সময়েই উদ্বোধনের তারিখ জানানো হবে।

খুলনা-মোংলা রেললাইন

প্রকল্পের সার্বিকভাবে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পাঁচটি ব্রিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তা ছাড়া রেললাইন লিংকিংয়ের কিছু কাজ হচ্ছে। রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। এই রেলরুটে আটটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনগুলোর শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং কাজ বাকি আছে। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় খুলনা-মোংলা রেললাইনের উদ্বোধন হতে পারে।

আখাউড়া-আগরতলা

আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। রেললাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ভবন নির্মাণের ফিনিশিংয়ের কাজ কিছু বাকি আছে। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই রেললাইনের উদ্বোধন করতে পারেন।

ভারতের নয়াদিল্লির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে অনুদান হিসেবে ভারত দিচ্ছে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেন, এমনটি জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের ফাউন্ডেশনের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সুপার স্ট্রাকচার কংক্রিটের ঢালাই কাজ চলছে। অন্যদিকে প্রথম ইউনিটের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর ভেসেলের মলটেন কোর ক্যাচার রূপপুরে এসে পৌঁছেছে। আশা করা যায়, ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট অর্থাৎ ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

এ ছাড়া আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৫ (নর্দান রুট) প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন। ২২ অক্টোবর ১৫০ সেতুর উদ্বোধন হবে।