অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বমানের পর্যটন

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে সকল খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পর্যটন। বলা যায় এটি স্মার্ট আয়ের অংশ। প্রতিটি দেশেরই কিছু দর্শনীয় তালিকা রয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন যেমন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। আর মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। কাজের চাপে যখন একঘেঁয়েমি লাগে তখনই পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো সাগর অথবা পাহাড়ের কাছে যায় মনকে শান্ত করতে। গত দশক থেকে বেশ ভালোভাবেই বিশ্ব পর্যটন এগিয়ে যাচ্ছিল। মাঝে করোনাভাইরাস তা-বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় রয়েছে এই পর্যটন শিল্প। আমাদের দেশে ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্রগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে।

ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু সময় পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যায় ঘুরতে। এই অভ্যাস মানুষের মাঝে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে যেমন নিজের মনের পরিবর্তন ঘটে পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কাজের চাপে সৃষ্ট দুরত্বের অবসান ঘটে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দেশও রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ- ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মরিশাসের কথা বলা যায়। ইউরোপের দেশগুলোও পর্যটনখাতকে অগ্রাধিকার দেয়। দেশের মোট জিডিপিতেও পর্যটন শিল্পের অবদান থাকে। যদিও বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবদান জিডিপিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ১০ শতাংশের বেশি।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনশিল্পের মোট অবদান ছিল ৭ হাজার ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি ছিল ৬ হাজার ২২৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ছিল ৯ হাজার ৮১৩ মিলিয়ন ডলার যা মোট জিডিপির ৩ শতাংশ। এরকম আরও অনেক দেশ আছে। প্রায় সবদেশ পর্যটনখাত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। দেশী পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকরদের জন্য আকর্ষণীয় করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাদের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, পর্যটনস্থানগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে। কিন্তু দেশের পর্যটনখাত প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখনো কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় একশ গুণ। নিস্বর্গের দেশ বাংলাদেশ। এখন নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। সেসব স্থানে বিদেশী পর্যটকের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক দেশী পর্যটক বেড়াতে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, ২০০০ সালে দেশের অভ্যন্তরে পর্যটক ছিল ৩ থেকে ৫ লাখ। ২০১২-১৩ সালে এ সংখ্যা ছয় গুণ বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখে পৌঁছায়। এছাড়াও বছরে আড়াই লাখেরও বেশি বিদেশী পর্যটক আসেন। বিশে^র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার বাংলাদেশে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র। বিদেশী পর্যটক এলেও তারা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্পটেই বেশি আগ্রহী। দেশীয় পর্যটকরাই প্রধানত পর্যটনকেন্দ্রগুলোর প্রাণ।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, করোনার কারণে পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ২০২১ সালে বিদেশী পর্যটক থেকে ভারত ৮ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ডলার, থাইল্যান্ডে ৩ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ২ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কা ৩০৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যেখানে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ১৬৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। দেশীয় পর্যটক থেকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের পর্যটনখাত পেয়েছে ৬ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের টাকা। অন্যদিকে করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক থেকে আয় করে ৩৬৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পর্যটন খাতে এগিয়ে রয়েছে মালদ্বীপ। যদিও মালদ্বীপের ভূতাত্ত্বিক কারণেই পর্যটনে এগিয়ে রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যটন খাতকে পর্যটক উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে বিদেশী পর্যটকের উপস্থিতি অনেক কম। যেখানে এশিয়াতেই বিদেশী পর্যটক যাচ্ছেন আমাদের দেশ থেকে অনেক বেশি। সুতরাং আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলো আরও আকর্ষণীয় ও নিরাপদ করতে কাজ করতেই হবে। দেশে প্রথম জাতীয় পর্যটন নীতিমালা করা হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০১০ সালে তা হালনাগাদ করা হয়। ২০১৫ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

পৃথিবী বিখ্যাত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আরও ভ্রমণস্থান রয়েছে এ দেশে। রয়েছে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। আমাদের পাহাড় সমৃদ্ধ পাবর্ত্য তিন অঞ্চল রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। সাজেক ভ্যালি, নিলাচল, নীলগিরি, বিছানাকান্দি, চা-বাগান, রাতারগুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পর্যটকরা ছোটেন সেখানে। এসব ছাড়াও প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র। এমনকি উপজেলাতেও যে দর্শনীয় স্থানসমূহ রয়েছে সেগুলোও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে।