দেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করতে তারা তাদের সর্বস্ব বাজি রেখেছিলেন। পরোয়া করেননি জীবনেরও। কিন্তু ৫০টি বছর তারা এই স্বাধীন দেশের মাটিতেই যে কষ্ট করেছেন, তা জাতির জন্য লজ্জার। অবশেষে সেই লজ্জা ঘোচানোর সময় এল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত হলো বীর নিবাস। অসহায় মুক্তিযোদ্ধারা এতদিন পর নিজস্ব ঠিকানায় খুঁজে পেলেন স্বস্তি।
জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রঙ্গলাল মোহন্ত বলেন, ‘একটু সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে কত কষ্টই না করেছি এত বছর! চুল, দাড়ি সব পেকে সাদা হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম যে কয়দিন বেঁচে আছি, ঝুপড়ি ঘরেই কাটাতে হবে। ভাবিইনি শেষ বয়সে এসে পাকা ঘরে থাকতে পারব। আমাদের মতো অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি করে ঘর বড়ই প্রয়োজন ছিল। সেটি দিয়ে কৃতার্থ করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’
একই ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা এনেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করে দিয়েছেন। এর থেকে সুখের আর কী হতে পারে।’
মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা তছলিম উদ্দিনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা গেছেন অনেক দিন। সন্তান নিয়ে ভাঙা ঘরে দিন কাটছিল। কিন্তু ভাবিনি স্বামীর মৃত্যুর পরও ভাঙা ঘর ছেড়ে পাকা ঘরে থাকতে পারব। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
সারা দেশের মতো নীলফামারীর জলঢাকাতেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য ১২টি বীর নিবাসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এসব ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণকাজের গুণগত মান বজায় রাখতে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও।
জলঢাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে এই বীর নিবাস। একতলাবিশিষ্ট বীর নিবাসের ভবনে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, ডাইনিং ও ড্রয়িং স্পেস এবং একটি বাথরুম রয়েছে। এখানে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা।’
জলঢাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ময়নুল হক বলেন, ‘বীর নিবাস নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিতে আমরা ছিলাম বদ্ধপরিকর। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে এসব ঘরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পের শিডিউল অনুযায়ী মানসম্মত উপকরণ দিয়ে প্রতিটি বীর নিবাস তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণকাজে সন্তুষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধারাও।’
‘বীর নিবাস’ পেয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নত হবে জানিয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাওয়া বীর যোদ্ধাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ঘর পেয়ে তাদের জীবনমান বদলে যাবে।’