দেশের প্রধান নগরগুলো যখন টানা বর্ষণে পানিবন্দী হচ্ছে তখন ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যায় রাজশাহীতে। এই শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে পদ্মা এবং উত্তর-পূর্বাংশে বরনই নদীর সঙ্গে ড্রেনেজগুলো যুক্ত রয়েছে। আর তা দিয়ে পানি দ্রুত নেমে যায়।
রাজশাহী শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রশংসা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট নগরবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন,‘সমতল এলাকা হওয়ার পরও রাজশাহীতে কিন্তু পানি জমে না। এই শহরের ড্রেনেজ সিষ্টেম সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’
কিন্তু যেখানে প্রতিটি শহর পানিতে ডুবছে সেখানে রাজশাহী কীভাবে ব্যতিক্রম? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় দীর্ঘ ৩২ বছর নগর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ও গত কয়েক বছর আগে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়া প্রকৌশলী আশরাফুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল রাজশাহী শহরে। সেই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সাল থেকে ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়ে এখনও পর্যায়ক্রমে তা চলমান রয়েছে। শহরের ভেতরের সব ড্রেন নির্মাণ শেষ এবং এখন শহরের বর্ধিতাংশ এলাকায় ড্রেন নির্মাণ চলছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। এসব ড্রেন পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ হওয়ায় এই শহরে টানা তিন ঘণ্টা ভারী বর্ষণও হলেও পানি জমে না।’
কিন্তু দেশের অন্য নগরে ড্রেন থাকার পরও পানি জমছে। এখানে কেন নয়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা ড্রেনগুলোর একপাশে রাস্তা নির্মাণ করেছি। ফলে ড্রেন পরিস্কার সহজতর হয়েছে। এছাড়া রাস্তার কারণে কেউ ড্রেন দখল করতে পারবে না এবং ড্রেন ময়লা আবর্জনায় ভরাট হবে না। এরই সুফল পাচ্ছে রাজশাহী।’
এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল ওয়াকিলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে, ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরের চেয়ে নগরায়নের চাপ তুলনামূলকভাবে কম। তাই এখনও নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় সেই চাপ পড়েনি। এই সুবিধার পাশে যুক্ত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনার আলোকে ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম। টানা বর্ষণে কিছু সময়ের জন্য পানি জমলেও এতে দ্রুত পানিগুলো নেমে যায়।’
এ ক্ষেত্রে রাজশাহী শহর অন্য শহরগুলোর জন্য মডেল হতে পারে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘রাজশাহীতে ড্রেনগুলো দখলমুক্ত। এছাড়া সেখানকার ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না। মনিটরিং নিশ্চিত করা হয়। তার সুফল পাচ্ছে রাজশাহী। চট্টগ্রামের ড্রেনগুলো হলো আবর্জনার ভাগার। পরিস্কার করে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তা ভরাট হয়ে যায়।’
শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকা, বরিশাল কিংবা সিলেট শহরের নালা ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক জলাধারগুলো (পুকুর, দীঘি ও নিচু ভূমি) ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সংরক্ষণের জায়গাগুলো কমে যাচ্ছে অন্যান্য শহরে। আর এরই প্রভাব নগরগুলোতে আজকের জলাবদ্ধতা চিত্র।