শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সচেতন দেশপ্রেমিক জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা মনে প্রাণে আশা করে।

আগস্ট মাস শোকের মাস। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের ও বাঙালি জাতির এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও উন্নয়নের পথে বিস্ময়করভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত সরকারপ্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত গণতন্ত্রকেই হত্যা করেছিল খুনি খোন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা। বঙ্গবন্ধুর সরকার যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন স্বদেশ বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করার কাজ পূর্ণোদ্যমে করছিলেন এবং তা থেকে সুফলও আসছিল ঠিক সেই মুহূর্তে সমগ্র বাংলাদেশের পুনর্গঠন, মানবাধিকার ও উন্নয়ন প্রভৃতি সবকিছুই পিছিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এমনকি বিদেশের মাটিতেও বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা নিরাপদ ছিলেন না। বিদেশ যাওয়ার সময় যাদের জীবিত দেখে গিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালে, ১৯৮১ সালে যখন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন তাদের কেউই আর জীবিত ছিলেন না। ঘাতকের নির্মম বুলেট তাদের প্রত্যেকের প্রাণহরণ করেছিল! বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনি, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর আর এক পুত্র শেখ জামাল, শেখ কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল, শেখ জামালের নবপরিণীতা বধূ রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ শিশুপুত্র শেখ রাসেল এমনি করে ১৮ জনকে খুনিরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণের নীল-নকশা বাস্তবায়নের পথ ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং উন্নয়ন চরমভাবে থমকে গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের পথে অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমান লেখায় এ বিষয়টির প্রতি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হচ্ছে।

২০০৬-এর পর বিশেষত ২০০৮-এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন হতে মুক্ত হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের দিক দিয়ে ‘বদলে যাওয়া দৃশ্যপট’ বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় (নমিনাল) লক্ষণীয় বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় (ক্রয়ক্ষমতার সমতা/পিপিপি) লক্ষণীয় বৃদ্ধি, বাজেটের আকার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি, জিডিপির আকার লক্ষণীয় বৃদ্ধি, জিডিপি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অগ্রণী অবস্থান; মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি; বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি; শিক্ষা ও কৃষি খাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি; ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়া; সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সফলতা; নারী উন্নয়নে বিস্ময়কর অগ্রগতি; স্বাস্থ্যসেবা খাতে লক্ষণীয় উন্নতি; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি; ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্তরাষ্ট্র নির্মাণের পথে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭১২টি পরিবারকে অর্থাৎ ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬০ জন মানুষকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এছাড়া কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমান বৃদ্ধির কারণে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লাখ জনে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৭৭%। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা হ্রাস পেয়ে ৩.৬% হয়েছে। বার্ষিক বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে ৭ লাখ ১ হাজার ৮৮ জন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৭ জন হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে ৪ কোটি ৩ লাখ জন ছিল দেশে মোট কর্মসংস্থান। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ কোটি ৭৩ লাখ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা)-এর আওতাধীন চালুকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২১৬টি। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫২টি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দ্রম্নততম বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে একটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যাগত লাভ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট), শক্তিশালী তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার দ্বারা সমর্থিত। কিন্তু সবচেয়ে যেটি অপরিহার্য তা হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা। যা দেশটির উন্নয়নকে টেকসই আকারে এগিয়ে নিচ্ছে।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্ট পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থাকা কালে গণতন্ত্র ও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন তথা উন্নয়নের জন্য বিস্ময়করভাবে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছিলেন। নির্বাচিত সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়ন তথা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মুক্তিযুদ্ধ সরকারের অভূতপূর্ব সফলতা বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’-এ পরিণত করেছে। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী অগণতান্ত্রিক পন্থায় বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী পরপর দুইজন সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং নব্বইয়ের পরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের বেসামরিক সরকারের সাম্প্রদায়িকতা ও পশ্চাতপদতার শাসনামলগুলো ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের মহিরুহ, অগণতান্ত্রিক এবং ‘উন্নয়ন হারানো’র শাসনামল। এর বিপরীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মানবাধিকার সংরক্ষণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিস্ময়কর অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রম্নততম বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। এসবই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবহিকতার ফসল। এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অপরিহার্য। তবেই কেবল গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার সঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও অব্যাহত থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সচেতন দেশপ্রেমিক জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা মনে প্রাণে আশা করে।

লেখক: অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী
পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ। সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা