দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬ গত বছর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে। এই অংশে মেট্রোরেল এখন নিয়মিত চলছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অক্টোবরের শেষে যাত্রী পরিবহনের জন্য খুলে দেয়া হবে। মতিঝিল পর্যন্ত শুরুতে ৩ স্টেশন চালু হবে। এর দুই মাস পরে আগামী জানুয়ারি মাসে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রোরেলের নিচের সড়ক বিভাজকের অংশে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে গতকাল বুধবার ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘ইতোমধ্যেই উদ্বোধনের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যখন প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন, তার পরদিন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তার আগে আমরা আশা করছি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেকোনো দিন সময় দেবেন, সেদিনই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে সব ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে না। কিছু ট্রেন মতিঝিল যাবে, কিছু আগারগাঁও পর্যন্ত যাবে। ট্রেনের নম্বর থাকবে। সেই নম্বর অনুযায়ী কোন ট্রেন আগারগাঁও পর্যন্ত, কোন ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে- সেটা বলা থাকবে। এটা সাময়িক বিষয়। যখন দেখা যাবে পুরো সিস্টেম ভালোভাবে চলছে, তখন আমরা আগের অংশের সঙ্গে মার্জ করে দেব। পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে পুরোদমে মেট্রোরেল চলবে।’
স্টেশন চালু করার বিষয়ে এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘আগারগাঁও থেকে মতঝিল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চালু হলেও সেই সময় সব স্টেশন চালু হবে না। শুরুতে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল, এ তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামিয়ে যাত্রী তোলা হবে।’
উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে চুক্তি হয় ডিএমটিসিএলের। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল স্থান পায়।
এরপর মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৬ জুন। প্রথমে প্রকল্প নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে মেট্রোরেল নির্মাণ খরচ বেড়েছে। এখন মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
কারিগরি ত্রুটিতে ২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল
বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণি এলাকার মেট্রো পথের কোনো জায়গায় এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিট থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পুনরায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে’।
দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেট্রো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র তা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ধরনের বৈদ্যুতিক গোলযোগকে প্রকৌশলের ভাষায় ‘ট্রাঞ্জিয়াল শর্টসার্কিট বলা হয়’। নির্ধারণ করা পদ্ধতি অনুযায়ী তিন সেকেন্ডের বেশি কোনো শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেট্রোর রেললাইন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যেন বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এর আগে গত সোমবার সকালেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল ৪০ মিনিট বন্ধ ছিল।