অপরূপ রূপে জাফলং মায়াবী ঝর্ণা, ভ্রমণের এখনই সময়

ছোট বড় পাথরের বুক বেয়ে নেমে আসা শান্ত সফেদ জল রাশির অদ্ভুত জল তরঙ্গ জাফলং মায়াবী ঝর্ণা। সবুজের বুকে অপূর্ব এক চাকচিক্যময় স্পট সিলেটের জাফলং মায়বী ঝর্ণা।এই মায়বী ঝর্ণার মায়ায় পড়ে অবিরাম তার দিকে ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।কেননা ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার এখনই সময়।

বর্ষায় সিলেট যেন তার রূপের বিচিত্র পসরা সাজিয়ে সবাইকে আমন্ত্রণ জানায় বাংলার অপার সৌন্দর্য দেখার।সবুজ চা বাগান, জাফলং, বিছনাকান্দি,সাদা পাথর,পাহাড় আর পিয়াইন নদী সহ ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়ি নদী নিয়ে সিলেট যেন কোনো রূপকথার দেশ।

অল্প দিনের ব্যাবধানে সকল পর্যটনস্পট গুলোকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে এই জলপ্রপাতটি।মায়াবী এ ঝরনার অবস্থান সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে খানিকটা অদূরেই।

নুড়ি পাথর ও বালুকণার উপড় দিয়ে বহমান ভারত থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলধারা আর ডাউকি নদীর উপর ঝুলন্ত ব্রিজের সৌন্দর্য দেখতে এমনিতেই পর্যটকদের প্রচারণায় মুখরিত। বিশেষ করে বর্ষাকালে পর্যটকদের জাফলং ভ্রমণ মানেই হচ্ছে ‘মায়াবী ঝরনা’র সৌন্দর্য উপভোগ করা।শীতকালেও রয়েছে এর সৌন্দর্যময়তা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকরা প্রতিদিন আসছেন মায়াবী এ ঝর্ণার প্রাণে। ঝরনার স্বচ্ছ জলে গাঁ ভিজিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছেন পর্যটকরা। অনেকেই নিজের সাথে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলে ক্যামারাবন্দি করে রাখছেন প্রিয় মুহূর্তটি। ওপারে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, পিয়াইনের স্বচ্ছ জল ও খাসিয়া পল্লি সব মিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। যা পৃথিবীর যে-কোনো মানুষ জাফলংয়ের এই সৌন্দর্যে বিমোহিত হবে।

জাফলং ভ্রমণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ভ্রমণ পিপাসুদের অনুভূতি জানতে চাইলে তারা বলেন, মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, পিয়াইনের স্বচ্ছ জল ও খাসিয়া পল্লী সব মিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। আমাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। শুধু আমরা কেন, পৃথিবীর যে-কোনো মানুষ জাফলংয়ের এই সৌন্দর্যে বিমোহিত হবে। এমন সুন্দর একটা জায়গায় আসতে পেরে তারা নিজেকে ধন্য মনে করছেন। সুযোগ পেলে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বিশেষ করে মায়াবী ঝরণার মায়ার টানে আবারও আসবেন বলে জানান অনেক পর্যটকরা।

ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সতর্ক করতে স্থান বিশেষ লেখা আছে স্টিকার ও ফেস্টুন।ট্যুরিস্ট পুলিশ হ্যান্ড মাইক বাজিয়ে বারবার পর্যটকদের দিয়ে যাচ্ছে সতর্কবাণী।পর্যটকরা একসময় জাফলংয়ে এসে সবুজে ঢাকা বিশাল বিশাল পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলরাশিতেই মুগ্ধ হলেও ইদানীং মায়াবী ঝর্ণা নতুন করে জাফলংয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়েছে।

অন্তত ৩০০ ফুটের মতো উঁচু এই পাহাড়ি ঝর্ণার পিচ্ছিল পাথর বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ওপরে ওঠেন। কয়েক ধাপে এই ঝর্ণার কিছু উপরে উঠে তারা সেলফি তোলেন, শীতল জলধারায় গা ভেজান। তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে এসে অনিয়ন্ত্রিত আচরণে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার শঙ্কাও রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি রতন শেখ জানান,মায়াবি ঝর্ণায় ভ্রমণের এখনি উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে এই ঝর্ণায় অনেক পানি থাকে, তবে শীত আসার সাথে সাথে পানি কমতে শুরু করে। অর্থাৎ মায়াবী ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার ভাল সময় হল বর্ষাকাল ও পরবর্তী কয়েক মাস। জলপ্রপাত টি সংগ্রামপুঞ্জিতে অবস্থিত বলে সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত নামেও বেশ পরিচিত।

মায়াবী এ ঝর্ণায় সিলেটে এসে শহর থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনায় যাওয়া যায়। লোকাল গাড়িতে জনপ্রতি বাসভাড়া পড়বে ৮০ টাকা। যাওয়া-আসার জন্য মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ৩০০০-৪০০০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ টাকা। শহরের যে কোনো অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে। জাফলংমুখী বাস ছাড়ে নগরীর শিবগঞ্জ থেকে। প্রতি এক ঘন্টা পরপর পাওয়া যাবে বাস।