আশ্রয়ণের ঘরে বদলে গেছে ৪৯২ পরিবারের জীবনের গল্প

মুরশিদা বেগমের স্বামী ছিদ্দিক উল্যা ইটভাটার শ্রমিক, নেই কোনো জায়গা-জমি। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন অন্যের বাড়িতে। বছর দুয়েক আগে বাড়ির মালিক জমি বিক্রি করে দেয়ায় সেখানে আর আশ্রয় হলো না। ৯ বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মেহেরাজকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মুরশিদা। অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো মুরশিদার করুন কাহিনী ফুটে ওঠে সমাজপতিদের কাছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীন ‘ক’ তালিকায় যুক্ত হয় মুরশিদার নাম। পেয়েছেন জমিসহ পাকা ঘর। এতে বদলে গেছে মুরশিদার জীবনের গল্প।

নোয়াখালী সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বাসিন্দা মুরশিদা বেগম এখন পাকা ঘরে থাকেন, সঙ্গে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে এবং স্বামীও। সেখানে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। তাদের সুখের সংসারে লাঘব হয়ে গেছে মাত্র দুই বছর আগের পোহানো দুঃখ। উপহারের জমি ও ঘরে বসবাস করে আবেগ-আপ্লুত মুরশিদা বেগম ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীকে।

শুধু মুরশিদা বেগমই নয়, একই অভিব্যক্তি ওই আশ্রয়ণে বাস করা রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেনেরও। কোনো মতে ৬ সদস্যের সংসার চললেও নদী ভেঙে সর্বস্বান্ত হওয়া দেলোয়ারের কোনো জায়গা-জমি ছিল না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় হয়েছে পাকা ঘরে। পাশের আশ্রয়ণের বৃদ্ধা ছালেহা বেগম বললেন, আমরা এখন কারো আশ্রয়ে থাকি না। এটা অ্যাঙ্গো (আমাদের) নিজ বাড়ি-ঘর। শেখের ম্যাইয়া (মেয়ে) হাসিনা অ্যাঙ্গোরে জমি দিছে, ঘর দিছে। অ্যাঙ্গোরে বাঁচার সম্মান দিছে। শেষ বয়সে জমি আর পাকা ঘরের মালিক হওয়ায় দারুণ খুশি অন্যের জায়গায় আশ্রয়ে জীবন পার করা এই ছালেহা বেগম।

তার মতো অন্যের আশ্রয়ে থাকা লাঞ্ছনা আর বঞ্ছনার শিকার ৪৯২ পরিবারকে আশ্রয়ণ ২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে নোয়াখালী সদর উপজেলায় আশ্রয়ণের ঘরে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সরজমিন সদর উপজেলার ৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সোলার লাইটিং, বড় মাঠ, শিশুদের খেলাধুলার সামগ্রীসহ দুই শতক জমিতে ঘরের মালিক হওয়ায় নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। তাদের রয়েছে চলাচলের সুন্দর রাস্তা, পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার।

ধর্মপুর আশ্রয়ণের বাসিন্দা ছায়দল হক বলেন, আমরা এখানে আমাদের বাড়িঘরের মতোই বসবাস করছি। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ, সোলার লাইটিং, বড় মাঠ, পুকুর ও পুকুরের ঘাটলা, বাচ্চাদের খোলাধুলার সামগ্রী, চলাচলের রাস্তা, স্কুল, বাজার সবই আছে। নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের সরকারি সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছি। তাদের কর্মমুখী করে তুলতে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর প্রদানের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষগুলোকে সামাজিক মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এখন সবাই সুখী, সবাই তাদের স্বপ্ন পূরণে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে।

অন্যের লাঞ্ছনা-বঞ্ছনা থেকে মুক্তি পেয়ে তারা নিজেরাই এখন কর্মমুখী হচ্ছেন। ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য যুগান্তকারী এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে স্বাচ্ছন্দে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছেন। আশ্রয়ণের ঘরে তাদের প্রত্যেক পরিবারের জীবনের গল্প পরিবর্তন হয়ে নতুন গল্প শুরু হয়েছে। আমরা তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী সদর উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।