মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে যাচ্ছে মরজালের সুস্বাদু লটকন

নরসিংদীর মরজাল বাসস্ট্যান্ড ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এলাকায় প্রতিদিন জমজমাট হয়ে উঠে লটকনের বিশাল পাইকারি হাট। ভোর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বেচা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এখানকার লটকন আকারে বড়, সুমিষ্ট, সুসাদু এবং দেখতে সুন্দর হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ফলে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এলাকার চাষি ও বেকার যুবকরা। লটকন চাষে তেমন খরচ না হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে সবার।

সরজমিনে মরজাল লটকনের হাট ঘুরে কথা হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে। তারা জানান, হাটে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার লটকন কেনাবেচা হয়। আকারভেদে লটকন মনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাষি ও বিক্রেতারা গাছ থেকে লটকন সংগ্রহ করে ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশা মোটরসাইকেল সাইকেলে করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে চলছে দর কষাকষি। চাষিরা দরদামে হলেই বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। লটকনের হাট ঘুরে মহাসড়ক থেকে শিবপুর, বেলাব, রায়পুরা উপজেলার লাখপুর, আজকিতলা, বটিয়ারা, মরজালসহ কয়েকটি গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে নানান প্রকারের ফলের গাছগাছালির অপরূপ শোভা। গাছের আড়াল থেকে কানে ভেসে আসে পাখিদের ডাক। রাস্তার দুই পাশে থাকা অসংখ্য লটকনের বাগান যে কারো চোখ জুড়াবে। অধিকাংশ গাছের নিচ থেকে ওপরের অংশের শাখা-প্রশাখায় থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা-পাকা লটকন। দেখে মনে হয় যেন পুরো গাছে হলুদ-সবুজ রঙের ফুল ফুটেছে। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালা পর্যন্ত থোকায় থোকায় লটকন ঝুলে আছে। চাষি ও পাইকাররা বাগানের পাকা লটকন গাছ থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার বাজারে বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নরসিংদীর রায়পুরা, শিবপুর ও বেলাব উপজেলায় ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। চাষি পরাগ আহাম্মেদ জানান, তিন বিঘা জমির লটকন পাইকারী ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করি। খরচে ১ লাখ টাকা, দুই মাস শ্রম দিলেই চলে। কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছি।

চাষি কাজী কামাল হোসেন বলেন, বাছাই করা সুস্বাদু বড় লটকনগুলো সারা দেশের চাহিদার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সাধারণত লটকন ২-৩ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। তবে প্যাকেটজাত ওই লটকন ৭-৮ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ সম্ভব। নুরুজ্জামান নামের এক চাষি জানান, পুরো মৌসুমে লটকনের ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে নতুন লটকন বাগান তৈরি করছেন।

কুমিল্লা থেকে পাইকারি ক্রেতা সামসু মিয়া জানান, প্রতিদিনই সকালে গাড়ি নিয়ে লটকন কিনতে আসি। আজো আকারভেদে মনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় ৩০ মন কিনেছি। চাহিদা ভালো থাকায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
মরজাল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মেম্বার বলেন, এখান থেকে লটকন কিনে পাইকারেরা সারাদেশে সরবরাহ করেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ লটকন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন হাটে কয়েক হাজার লোক কাজ করে। ৭০ থেকে ৯০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হয়। ভরা মৌসুমে ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ জেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন উৎপাদিত হয় শিবপুর উপজেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে বেলাব এবং তৃতীয় অবস্থানে রায়পুরা উপজেলা। হাটে কোটি টাকার লটকন ক্রয়-বিক্রয় হয়। এ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য উপযোগী। তবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ ফলের আবাদ সম্প্রসারণ ও জনগণের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিস।