আব্দুল্লাহ আল হাসান
সমাজের তৃণমূল সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করা, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সহ নানা বিষয়ে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ আল হাসান ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পথচলা ফাউন্ডেশন’। এটি দেশের ১৬ জেলায় সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করছে। আব্দুল্লাহ আল হাসান ২৭৮টি কর্মশালার মাধ্যমে ১ হাজার ৪১২ জন তরুণকে ব্যবসায় উদ্যোগ, নেতৃত্ব এবং যোগাযোগ দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়নে সক্ষম হয়েছেন। সংগঠনটি ২০২০ সালে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড, ২০২১ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের সেরা ৩১ এবং ২০২১ সালে জাতিসংঘ আইভিডি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।
নিশাত সুলতানা চৌধুরী
অভাবী, সুবিধাবঞ্চিত ও সম্ভাবনাময়ী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে ‘এক টাকায় শিক্ষা’ সংগঠনের যাত্রা। মূলত পড়তে না পারা শিক্ষার্থীদের পড়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত সুলতানা চৌধুরী তার সহপাঠী মো. রিজুয়ানকে নিয়ে গড়ে তোলেন। সংগঠনটির মাধ্যমে প্রায় ৪৫০০ জন সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’, ২০১৭ সালে এসডিজি জিনিয়াস চ্যাম্পিয়ন অ্যান্ড বেস্ট আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড সহ নানা সম্মাননা পেয়েছে সংগঠনটি।
জহির রায়হান
নারী ও কিশোরীদের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা নাগরিক হিসেবে পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানবাধিকারকর্মী ও জেন্ডার অ্যাডভোকেট জহির রায়হানের হাত ধরে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ ফর চেঞ্জ বাংলাদেশ’। বর্তমানে তিনি সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্বরত। লৈঙ্গিক সমতার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে নারীর ক্ষমতায়ন ক্যাটাগরিতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’, ‘সার্টিফিকেশন ফর ডিস্টিংশন’, ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ সহ বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছে।
শেখ শোয়াইবুর রহমান
দেশের কৃষিকে স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও টেকসই করার লক্ষ্যে ও কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য থেকেই শেখ শোয়াইবুর রহমান ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘এজিএসএস’ নামের সংগঠনটি। তিনি এ সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদেরকে টেকসই এবং স্মার্ট কৃষি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করেন এবং কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কৃষি খাতের ৪০ আত্মপ্রত্যয়ী তরুণকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি পরিবেশ বিষয়ক বেশকিছু কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।
জ্যোতির্ময়ী দাশ নোভা
গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে জ্যোতির্ময়ী দাশ নোভা প্রতিষ্ঠা করেন ‘ওয়াইজ’ (উই ইন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)। বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের গুণগত শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। পাশাপাশি নোভা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিক্ষাদান, স্বাস্থ্য সহায়তা ও শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশেও কাজ করেন। তিনি এমন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন— যেখানে সবার গুণগত শিক্ষালাভের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে।
আহনাফ আবরার হোসেন
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আহনাফ তার বন্ধুদের নিয়ে ২০১৯ সালে গড়ে তুলেছেন ‘ভরসাস্থল’। লক্ষ্য সমাজের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। করোনাকালে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ সরবরাহ করেছে। এবার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য ভ্যানগাড়ি ও সেলাই মেশিনের ব্যবস্থা করছে। ইত্তেফাক প্রজন্মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহনাফ বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ‘ডিআরএমসি সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করছি, এটি কমিউনিটি সেবায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবে।’
এস এম মবিন সিকদার
বিজ্ঞান শিক্ষামূলক কন্টেন্টের প্লাটফর্ম ‘সায়েন্স বী’র প্রতিষ্ঠাতা মবিন সিকদার। লেখাপড়া করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। দেশের শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে ২০১৮ সালে ‘অরবিটাল’ নামে এক ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘সায়েন্স বী’। বর্তমানে এটি বাংলাভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানভিত্তিক অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম। তাদের সাথে যুক্ত রয়েছে ২ লক্ষাধিক নিবন্ধিত সদস্য। ইত্তেফাক প্রজন্মকে মবিন বলেন, ‘প্রিন্সেস ডায়ানার গুণাবলি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে, এখন সেই অনুপ্রেরণা আরও বেড়ে গিয়েছে।’
ঋতুরাজ ভৌমিক
সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় শিশুদের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহ করে এ বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ১০ বছর বয়সী ঋতুরাজ ভৌমিক। এই বয়সে বই লিখে কনিষ্ঠতম সিরিজ বই লেখক হিসেবে গিনেস বুকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে ঋতুরাজ। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাপকা-বেটা’ ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের খুদে গায়ক হিসাবে পরিচিত। ঋতুরাজের সাফল্যে তার বাবা শুভাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘ঋতুরাজ এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড জয়ী। বর্তমানে সে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।’
এফ এম ফারহান ফাইয়াজ
‘পরিকল্পনা ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা এফ এম ফারহান ফায়াজ। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে সামাজিক সচেতনতা তৈরি ও অসহায় মানুষদের নিয়ে। তারা ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’ ও ‘আম্ফান রিলিফ প্রজেক্ট’র মাধ্যমে ১৪ হাজার ইউএস ডলার ফান্ড সংগ্রহ করে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করেছে।