কাল থেকে রুপিতে বাণিজ্য শুরু, ঢাকা-দিল্লি কার কী সুবিধা

ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ-ভারত। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে রুপিতে লেনদেনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এতে তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করতে পারবে এই দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

আসলে রুপিতে লেনদেনে ঢাকা-দিল্লির কার কী সুবিধা। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতীয় রুপিতে লেনদেন হলে আমাদের সুবিধা তেমন কিছু দেখছি না। আবার ভারতীয় রুপি রিজার্ভ কারেন্সি নয়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সোজা কথা অসুবিধাই হবে। কারণ আমরা রপ্তানি করি কম, আর আমদানি করি বেশি। রপ্তানি করলে তারা রুপিতে শোধ করবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমদানির এতো রুপি কোথা থেকে পাওয়া যাবে। তার মানে, ডলারে ভাঙিয়ে আমদানি দায় শোধ করতে হবে। অথবা ভারতকে ডলারে দিতে হবে। তাতে আমাদের কোনো লাভ নেই। ভারতও টাকা নিতে চাইবে না। কারণ তারা টাকা কোথায় খরচ করবে। যেমন—ভারত রাশিয়া থেকে রুপিতে অনেক কিছু কিনেছে। এখন রাশিয়া বলছে, ভারতীয় রুপি তারা খরচ করতে পারছে না। অর্থাৎ রাশিয়া এখন রুপিতে লেনদেন করতে চাচ্ছে না। আমি জানি না কোন বিবেচনায় বাংলাদেশ এটি করেছে। এখন দেখার বিষয় ফলাফল কী আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। ভারত অবশ্য মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য শুরু করেছে। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু করতে যাচ্ছে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রুপি এবং টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিল। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে। এখন লেনদেন প্রক্রিয়া চালু হলে প্রাথমিকভাবে অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়বে। এ ছাড়া, টাকায় লেনদেনও পরবর্তীতে চালু করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করছে, এই পদ্ধতি চালু করা গেলে ভারতকে বাণিজ্যিক লেনদেনে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হতো, তার একটি অংশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না। ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে। এতে এক্সচেঞ্জ রেটের ক্রস কনভারশন কিছুটা কমে আসবে। ব্যবসার খরচও কমবে। তবে এটি চালু হওয়ার পর বোঝা যাবে আসলে কতটা সাশ্রয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি হয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রুপি পাবে, যা এত দিন ডলারে পেয়ে আসত। আর আমদানির ক্ষেত্রেও দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি মূল্য রুপিতে পরিশোধের সক্ষমতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। ফলে আমদানি বাবদ বাকি অর্থ ডলারেই শোধ করতে হবে।

কোনো ব্যাংক বা ব্যবসায়ী ডলার কিংবা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রুপি কিনে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবে না। বাংলাদেশ অংশে সোনালী, ইস্টার্ন ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে এ বাণিজ্য হবে। ভারতের অংশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হবে।

এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও কাজে দেবে। রুপিতে লেনদেন ডলার নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেবে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক। তবে শুধু ভারতীয় রুপিতে থাকলে চলবে না, এই লেনদেন সুবিধা টাকায়ও চালু করতে হবে। যদিও ভারতের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ খুব কম। তবে ভবিষ্যতে টাকায় লেনদেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের আমদানি ও রপ্তানিতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এ জন্য রুপিতে লেনদেনে ডলার-সংকট কমবে না। উলটো আমরা আগে যে ২ বিলিয়ন ডলার পেতাম, সেটা এখন ভারত রুপিতে পরিশোধ করবে। এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই। এতে বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির ডিমান্ড বাড়বে। আর ভারতে মুদ্রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী হবে।