উড়াল সড়কের উত্তরা ফার্মগেট অংশ সেপ্টেম্বরে চালু

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন

রাজধানীর যানজট নিরসনে চলতি বছরে সেপ্টেম্বরেই চালু হবে দেশের সবচেয়ে বড় উড়াল সড়ক ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র একটি অংশ। রাজধানীর উত্তরার কাওলা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তরা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অংশটি চালু হলে মাত্র ১০ মিনিটে উত্তরা থেকে ফার্মগেট যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিক্সাসহ কোনো থ্রি হুইলার চলাচল করতে পারবে না। এই উড়ালপথে শুধু বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপসহ মোটরগাড়ি চলাচল করতে পারবে। তবে এজন্য টোল দিতে হবে। উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে টোল ধরা হয়েছে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য মোটরগাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাকে ৫০০ টাকা আর ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা।

তবে মাঝপথে নিবে গেলে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য মোটরগাড়িতে ১০০ টাকা ও যাত্রীবাহী বাসে ২০০ টাকা টোলের হার নির্ধারণ করা আছে। তিন বছর পরপর টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প ব্যয় ও টোলের হার বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করে। কিন্তু এই টোলের হার এখনো চূড়ান্ত হয় বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার বলেন, ‘দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে পিপিপি ভিত্তিতে। এই প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে খরচ উঠাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সম্পন্ন অংশের জন্য একটি টোলের হার প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তির সময় ধরা হয়েছে।’ কিন্তু তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

শনিবার রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। তবে এই উড়াল সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলবে না।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ, বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত শেষ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের সর্বমোট কাজ শেষ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি। এ সড়কে যানবাহন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে। গাজীপুর থেকে কাওলা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি উঠে যাবে, এরপর এই গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রামের কুতুবখালীতে গিয়ে নামবে। তাতে ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং এখানে যানবাহনে চাপ অনেক কমে যাবে।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, উত্তরা-যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই যাত্রাবাড়ী যাওয়া যাবে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংযোগ সড়কের কার্পেটিং সম্পন্ন হলেই এটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। এরই মধ্যে রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে রেলিং বসানোর কাজও চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাওলা থেকে বনানী অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দক্ষিণে কাওলা-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়াল সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তবে সড়কে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। র‌্যাম্পসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে গঠিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ অংশের সংযোগ ও ট্রাফিক ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। উত্তর ও দক্ষিণ গেটওয়ের সংযোগ উন্নত হবে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।