রপ্তানি আয়ে রেকর্ড

২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় এসেছে ৫৫ বিলিয়ন ডলার

প্রবাসী আয়ের পর পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে বছর শেষ করেছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এক অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও বিদায়ী অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু গত জুনে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

ডলার সংকট নিয়ে বছরখানেক ধরেই দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুটি উৎস থেকেই গত বছরের শেষ দিকে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কিছুটা কমে যায়। তবে পরে আবার তা ঘুরেও দাঁড়ায়। বিদায়ী অর্থবছর শেষে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছিল ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। প্রায় ৮০-৮২ শতাংশ আয় আসে এই খাতটি থেকে। বিদায়ী অর্থবছরেও দেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের অবস্থান বেশ ভালো ছিল। বিদায়ী অর্থবছরে দেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ইপিবির তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। অর্থবছরটিতে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক ছাড়া রপ্তানি আয়ের অন্যান্য খাত খুব একটা ভালো করতে পারেনি বিদায়ী বছরে। নেতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষিপণ্যসহ হিমায়িত মাছ, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, স্পেশাল টেক্সটাইল ও কার্পেটে। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হিমায়িত মাছে ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রাসায়নিক পণ্যে ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ, রাবারে ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, হ্যান্ডিক্রাফটসে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিল্কে ৩০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, কার্পেটে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ ও স্পেশাল টেক্সটাইলে রফতানি কমেছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাকের মতো রপ্তানি বেড়েছে প্লাস্টিক, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য, প্রিন্টেড পণ্য এবং কটন ও কটনজাত পণ্যসহ অল্প কিছু পণ্যে। প্লাস্টিক পণ্যে রপ্তানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, কাঠ ও কাঠজাত পণ্যে ১০৭ শতাংশ, প্রিন্টেড ম্যাটারিয়ালসে ২২৩ শতাংশ এবং কটন ও কটনজাত পণ্যে ৬৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে।