সশরীরে নয়, মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহারে লেনদেন

কোনো শাখা, উপ-শাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না

কোনো শাখা, উপ-শাখা, এটিএম বুথ ছাড়াই পুরোপুরি প্রযুক্তির নির্ভর করে চলবে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। সশরীরে লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। মোবাইল আর ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের সেবা দেবে ব্যাংকটি। এ ব্যাংক গঠনে লাগবে ১২৫ কোটি টাকা, পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা। গতানুগতিক নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে হবে। নতুন ধারার এ ব্যাংক চালু করতে আগ্রহীদের আবেদন নিতে নতুন ওয়েব পোর্টালও খোলা হয়েছে। তবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি। তবে মোবাইলে আর্থিক সেবার কোম্পানি ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আগ্রহী। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে কোম্পানি দুটি।

জানা গেছে, নগদ টাকায় লেনদেন নিরুৎসাহিত করে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত মাসেই নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাগুজে নথি জমা দিয়ে নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ডিজিটাল উপায়েই জমা দিতে হবে। আবেদন ফি হবে পাঁচ লাখ টাকা, যা অফেরতযোগ্য। আর এই ব্যাংক খুলতে ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ এর জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দিতে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবেদনের জন্য ৪২ দিন উন্মুক্ত থাকবে পোর্টালটি। আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে আগ্রহীদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি এটা নিশ্চিত।

তবে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে, এই সময়ের মধ্যে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। বিকাশ জানিয়েছে, নীতিমালার শর্ত পূরণ এবং নীতিগত অবস্থান ঠিক করে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তারা আবেদন করবে। সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত কোম্পানির নামে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে ছাড়পত্রও সংগ্রহ করেছে তারা।

নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপ-শাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারবেন। তাদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতে হবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক এই চলবে। নীতিমালায় বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের যোগান দিতে হবে। ঋণখেলাপি কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে চলমান থাকলে তারাও আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

স্বল্প অর্থের লেনদেন সহজ ও দ্রুত করতে ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সেবা দিয়ে আসছে বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়ের মত এমএফএস কোম্পানিগুলো। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজস্ব অ্যাপে এবং ইন্টারনেট ছাড়াই শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবহার করে এ সেবাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এ সেবা মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১০ সালে এমএফএস কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরের বছরের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে এমএফএস সেবা শুরু হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সেবাটি এখন ‘রকেট’ নামে পরিচিত।

এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। দেশের এমএফএস সেবার বড় অংশই এ কোম্পানির দখলে। পরে বাজারে আসে ‘নগদ’। ব্যাংকভিত্তিক মডেলে যাত্রা শুরু করা এ খাতে বর্তমানে ১৩টি এমএফএস কোম্পানি সেবা দিচ্ছে। গত এপ্রিল শেষে দেশে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সারাদেশে ১১ লাখের বেশি এজেন্ট এমএফএস সেবার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে, যেখানে দৈনিক গড়ে এক কোটি বারের বেশি লেনদেন হয় হচ্ছে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এর চেয়েও বড় পরিসরে অর্থের লেনদেন করা এবং নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশে চালু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক। এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষার্থীর বেতন, সার্ভিস চার্জ ও ট্রেজারি চালানসহ সরকারি বিভিন্ন ফি আগের চেয়ে কম সময় ও কম খরচে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।