দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। রবিবার (১৮ জুন) রাতে জোয়ারের সময় ডিম ছেড়েছে মাছগুলো। এবার ডিম পাওয়ার পরিমাণ প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি।
এর আগে ২০২০ সালে ডিম সংগ্রহ হয় সাড়ে ২৫ হাজার কেজি। এখন হালদা নদীর পাড়ে চলছে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কার্যক্রম। এর মধ্যে কেউ সরকারি হ্যাচারিতে আবার কেউ সনাতন পদ্ধতিতে মাটির গর্তে রেণু ফোটানোর চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এবার দেরিতে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। যা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এত বেশি ডিম পাওয়া যাবে, তা জেলেরাও চিন্তা করতে পারেননি। সেজন্য ডিম সংগ্রহে নিয়োজিত ডিঙি নৌকাগুলোতে এত বেশি ডিম রাখার সরঞ্জাম রাখা ছিল না। এবার ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা। এখন ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কার্যক্রম চলছে।’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে রেণু বিক্রি শুরু হবে। অর্থাৎ ডিম সংগ্রহের ৯৬ ঘণ্টা পর থেকে রেণু বিক্রি করা যায়। এবার কত শতাংশ ডিম থেকে রেণু ফুটবে, এখন তা দেখার বিষয়। গেল বছর প্রথমদিন প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হয় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। দিন যতই যাবে রেণুগুলো বড় হবে ওজনে কম ধরবে, দামও ভালো পাওয়া যাবে।’
হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকায় ডিম সংগ্রহকারী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ করছি আমরা। হালদা নদীর পাড়ে হাটহাজারীতে তিনটি এবং রাউজান উপজেলায় একটি, এনজিও সংস্থা আইডিএফ-এর একটি হ্যাচারি ছাড়াও ৭৬টি মাটির কোয়াতে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ চলছে। যারা সরকারি হ্যাচারিগুলোতে ডিম ফোটানোর সুযোগ পাননি তারা সনাতন পদ্ধতিতে মাটির গর্তে ডিম ফোটানোর চেষ্টা করছেন।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, রবিবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এর আগে থেকে জেলেরা নৌকা নিয়ে হালদার পাড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল কখন ডিম ছাড়বে। নদীর প্রায় ৮-১০ স্থানে ডিম ছেড়েছে। প্রায় ৩০০টি নৌকায় করে জেলেরা এসব ডিম সংগ্রহ করেন। একেকটি নৌকা ৫০ কেজির ওপরে ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, এবার হালদা নদীতে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। যার সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৩৮ কেজি। ২০২১ সালে ছিল আট হাজার ৫০০ কেজি এবং ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কার্প জাতীয় (রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউস) মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটিতে এবার নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ছাড়েনি কার্প জাতীয় মাছ। এর জন্য তীব্র দাবদাহ এবং হালদা নদীতে কর্ণফুলী ও সাগরের লোনা পানি প্রবেশ তথা জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়।
রুই জাতীয় মাছের মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।