অনলাইনে ৮০০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা

কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদুল আজহাতেও কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে অনলাইন মাধ্যমগুলোতে। বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু কেনাবেচার কার্যক্রম শুরুও করেছে। দেশে অনলাইনে কোরবানির পশুর বাজার ১০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার।

২০২১ ও ২০২২ সালে অনলাইনে পশু কেনাবেচার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি এবং ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে করোনা-পরবর্তী সময় বিবেচনায়, এ বছর অনলাইনে পশু বিক্রির পরিমাণ কমবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অ্যাস্পায়ার-টু-ইনোভেট (এটুআই) সূত্র বলছে, এবার প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পশু অনলাইন মাধ্যমগুলোতে বেচাকেনা হতে পারে।

২০১৫ সাল থেকে দেশে কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম পাইওনিয়ার ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘বিক্রয়’। পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল মিট, সাদিক এগ্রো, দারাজ অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করে। কিছু কিছু প্ল্যাটফর্ম পশু বিক্রির পাশাপাশি জবাই করে প্রসেসিং করা মাংস গ্রাহকদের বাসাবাড়িতে হোম ডেলিভারি সেবাও দিচ্ছে। ২০২১ সালে এটুআই প্রকল্পের আওতায় ‘একশপ’-এর তত্ত্বাবধানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে একত্রিত করে শুরু হয় ডিজিটাল হাট। এতে সহযোগী হিসেবে থাকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে অনলাইনে সারা দেশে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৯টি পশু বিক্রি হয়। এর মধ্যে ডিজিটাল হাটে যুক্ত ৪৬৮টি হাটে পশু বিক্রির আনুমানিক সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৬টি। সব মিলিয়ে বিক্রীত পশুর আর্থিক মূল্য প্রায় ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০২২ সালে এ সংখ্যা হ্রাস পায়। সে বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, আঞ্চলিক

হাট এবং অনলাইন মার্চেন্ট বা খামারিদের থেকে মোট বিক্রীত পশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ হাজার, যার আর্থিক মূল্যমান ছিল ১ হাজার ৮ কোটি টাকা।

এটুআইর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, এ বছর অনলাইনে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পশু অনলাইনে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

বিক্রয়: মার্কেটপ্লেস হিসেবে পশু বিক্রেতা এবং আগ্রহী

ক্রেতাদের মধ্যে যোগসূত্র করে দিচ্ছে ‘বিক্রয়’। ২০২১ সালে প্ল্যাটফর্মটিতে নিবন্ধিত ও বিক্রীত পশুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮ হাজার ১৪৭ এবং ১ হাজার ৩২০টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯ হাজার এবং ৩ হাজার। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন নির্বাহী হুমায়রা শারমিন্দ আলম বলেন, এ বছর প্রায় ১০ হাজার পশু বিক্রির পোস্ট নিবন্ধিত হবে আমাদের প্ল্যাটফর্মে।

২০২২ সাল পর্যন্ত বিক্রয় এ নিবন্ধিত হওয়া পশুর তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অনলাইনে সবচেয়ে বেশি পশুর কেনাবেচা হয় ঢাকা অঞ্চলে। সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ পশু এখানে কেনাবেচা হয়। এরপরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে চট্টগ্রাম (২২%), রাজশাহী (১৬%), খুলনা (১০%), সিলেট (৯%), রংপুর (৫%), ময়মনসিংহ (৪%) এবং বরিশাল (৩%)। সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ গরু বিক্রি হয় যেগুলোর দাম ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে।

বেঙ্গল মিট: বিগত আট বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও অনলাইনে কোরবানির হাট নিয়ে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। প্রতিষ্ঠানটির কোরবানির হাট প্রজেক্টের লিড মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে পশু কেনার পাশাপাশি কোরবানি করে মাংস হোম ডেলিভারি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ছাগল হলে আমরা ঈদের দিনই পৌঁছে দিচ্ছি। যথাযথ কোল্ড চেইন বজায় রেখে পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ডিজিটাল হাট : এটুআইর একশপ প্ল্যাটফর্মের অধীন পরিচালিত ‘ডিজিটাল হাট’ মূলত অনলাইনে পশু বিক্রয়কারী সব প্রতিষ্ঠানকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সব পশু একটি স্থান থেকেই কিনতে পারবেন ক্রেতারা। পাশাপাশি চাইলে ‘এসক্রো’ সুবিধা নিয়ে ‘একপে’র মাধ্যমে মূল্যও পরিশোধ করা যাবে ডিজিটাল হাটে। এটুআইর ই-কমার্স বিভাগের প্রধান রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সেখানকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে ফেসবুকে পেজ খোলেন। সেই পেজকে আমরা ডিজিটাল হাটের সঙ্গে একীভূত করে দিই। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের পরিশোধ করা অর্থ একপে’তে জমা থাকবে। তিনি যখন পশু বুঝে পেয়েছেন বলে জানাবেন, তখন সেই অর্থ পশু বিক্রেতাকে দিয়ে দেওয়া হবে। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থই সুরক্ষিত থাকে। পুরো বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে একশপ।

এটুআইর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও ডিজিটাল হাট পরিচালনার সব প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। আগামী ২০ জুন থেকে এ বছরের ডিজিটাল হাট চালু হবে। তবে এবার স্লটারিং হাউসে পশু জবাই করে কোরবানির মাংস হোম ডেলিভারির সুবিধা থাকছে না। কারণ, এবার সশরীরে হাটে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি থাকবে গ্রাহকদের মাঝে।

তবে পশু কোরবানি করে হোম ডেলিভারির সুবিধা রাখছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, এ বছরও আমাদের এ সেবা থাকবে। বসিলা স্লটারিং হাউস ছাড়াও ডিএনসিসি নির্ধারিত যেসব পয়েন্ট আছে কোরবানির পশু জবাই করার, সেখান থেকেও পিকআপের মাধ্যমে জবাই করা পশুর মাংস হোম ডেলিভারি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।