এবছর কোরবানীর ঈদে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫৫ লাখ পশু প্রস্তুত করেছে খামারীরা। এতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রি হতে পারে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গবাদি পশু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের শীর্ষ দুটি সংগঠন নেতাদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ ইমরান জানান, এ বছর তাদের সারাদেশের ১৭ হাজার সদস্যের প্রায় ২৫ লাখ গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সে হিসেবে গড়ে ১ লাখ টাকা হারে গরু বিক্রি হলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার গরু বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের।
অপরদিকে, ছাগল ও ভেড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ছাগল ও ভেড়া খামারি সমিতির সভাপতি হাসিবুল হাসান জানান, সারাদেশে এবার প্রায় ৩০ লাখ ছাগল ও ভেড়া বিক্রি হতে পারে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রয়েছে ছাগল ও বাকী ৩০ শতাংশ রয়েছে ভেড়া। সে হিসেবে ১৫ হাজার দরে ছাগল বা ভেড়ার বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। এর আগের বছরও অর্থাৎ ২০২১ সালে কোরবানি হয়েছে ৯৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পশু।
শাহ্ ইমরান জানান, এবার গরুর থেকে ছাগলের চাহিদা বেশি থাকবে। কোরবানীদাতাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে পশুর দামও বৃদ্ধি পাবে এবার। যারফলে কমদামে ছাগলের দিকেই চাহিদা বেশি থাকবে বলে তিনি জানান।
খামারিরা বলছেন, প্রাণিখাদ্যের উৎপাদন খরচ এমনভাবে বাড়িয়েছে, পশুর দাম না বাড়িয়ে কোন উপায় নেই। তবে বাড়তি দামে বিক্রি করলেও গত বছরের তুলনায় লাভ কমে যাবে। আবার বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
কারণ হিসেবে তারা বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের খরচ বেড়েছে। এই খরচ সামাল দিতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে, কোরবানি করা নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত থাকবে। যারা একটি ছোট বা মাঝারি গরু দিয়ে কোরবানি করতো তারা হয়তো শেয়ারে কোরবানি করবে।
খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে দাম বৃদ্ধির একটি চিত্র তুলে ধরে নাটোরের নব্য ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের ম্যানেজার মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ৭২টি গরুর মধ্যে ৫ মণ ওজনের সাতটা গরু বিক্রি করেছি। একেকটি গরু ১ লাখ ৩৭ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। যা গত বছরের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ বেশি। গত বছর এই ওজনের গরুতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেছিলাম, কিন্তু বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করেও এবারে ১০-১২ হাজার টাকার বেশি লাভ করতে পারিনি।