আবারও শুরু হচ্ছে করোনার বুস্টার ডোজ

৩০ লাখ ফাইজারের টিকা এসেছে

করোনা মহামারি শেষে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জন-জীবন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে সব নিষেধাজ্ঞা। টিকা কার্যক্রমে সফলতার কারণেই দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে মজুত টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বুস্টার ডোজসহ টিকাদান কর্মসূচি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ৩০ লাখ ডোজ ফাইজারের ভিসিভি (ভ্যারিয়েন্ট কন্টেয়নিং ভ্যাকসিন) টিকা পাওয়ায় আবার শুরু হতে যাচ্ছে বুস্টার ডোজের টিকাদান কর্মসূচি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহেই শুরু হবে এ কার্যক্রম।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনার সংক্রমণও বাড়ায় চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের কপালে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব পক্ষ কাজ করছি। তবে রোগী বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। এমন অবস্থায় আমাদের সচেতনতার বিকল্প নেই। তবে করোনা বাড়লেও পূর্বের মতো সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আবারও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন পাওয়া এই টিকা ৩য় এবং ৪র্থ ডোজ হিসেবে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য এ সপ্তাহ থেকেই দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে স্থায়ী কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্র থেকে দেওয়া শুরু হবে।

চলমান কোভিড মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সফলভাবে টিকা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব যত টিকা পেয়েছে তার ১১ ভাগ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে। সেই টিকা থেকে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮৮.৫১ শতাংশ মানুষকে ১ম ডোজ, ৮২.১৮ শতাংশ মানুষকে ২য় ডোজ, ৩৯.৬২ শতাংশ মানুষকে ৩য় ডোজ এবং ১.৮৫ শতাংশ মানুষকে ৪র্থ ডোজ টিকা ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। নতুন এই টিকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই ভিসিভি টিকা ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটির ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার ইতিবাচক মতামত রয়েছে।

কারা কারা এই টিকা নিতে পারবে এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ৩য় ডোজ পাবে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি, ৪র্থ ডোজ পাবে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর বা তার বেশি ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং সম্মুখ সারির যোদ্ধারা। ৩য় ডোজ দেওয়া হবে ২য় ডোজ টিকা প্রাপ্তির ৪ মাস পর। ৪র্থ ডোজ পাবেন ৩য় ডোজ প্রাপ্তির ৪ মাস পর।

মন্ত্রী বলেন, আমরা ৩৬ কোটির অধিক টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, বুস্টারের দুই ডোজও রয়েছে। গড়ে আমরা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ লোককে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে গড় ৭২ শতাংশ। স্বল্পোন্নত দেশে মাত্র ৩০ শতাংশ। আমাদের টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। টিকা নেওয়ার লোক এখন কম তুলনামূলকভাবে।

নতুন এই টিকা ফাইজারের তৈরিই জানিয়ে তিনি বলেন, নাম হলো ভিসিভি বা ভ্যারিয়ান্ট কনটেইনিং ভ্যাকসিন। এই টিকাটি নতুন উদ্ভাবিত টিকা এবং বিভিন্ন দেশে দেওয়া হচ্ছে। এই টিকার অনুমোদন ডব্লিউএইচও-র রয়েছে। আমাদের দেশে টিকাদানের জাতীয় কারিগরি কমিটির অনুমোদন ও মতামত রয়েছে। ওষুধ প্রশাসনেরও অনুমোদন রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ট্রায়ালের কাজও শেষ করেছি, যেখানে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।

সিরামের সঙ্গে কোনো চুক্তি বলবৎ নেই ॥ এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমরা যে চুক্তি করেছিলাম, সেই চুক্তি অনুযায়ী দেড় কোটি টিকা পেয়েছিলাম। আমরা দেড় কোটির টাকা পরিশোধ করেছিলাম বাকি দেড় কোটি পাইও নাই, আমরা কোনো টাকা দেইও নাই। কাজেই সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কোনো টাকা-পয়সার ব্যাপার আমাদের নেই। ওই চুক্তি এখন আর সেই পর্যায়ে বলবৎ নেই।

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ছড়ানোর আশঙ্কা নেই ॥ দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, অন্যদিকে সব বিধিনিষেধও উঠে গেছে, নতুন করে বিধিনিষেধ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি জেনেভা থেকে এসেছি। সেখানে দেখলাম একটি লোকও মাস্ক পরেনি। সেখানে যে রোগী হচ্ছে না দু-একটা করে তা নয়। আমাদের এখানেও দু-একটি করে রোগী পাচ্ছি। ইদানীং কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে তেমন কোনো রোগী নেই। যেহেতু সবাই টিকা নিয়েছে সেজন্য মারাত্মক আকার ধারণ করছে না করোনা। তবে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলবো, করোনা যেহেতু আছে আমাদের সতর্ক থাকাটা ভালো।