যুক্তরাজ্যে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি দুই শিক্ষার্থী

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গ্লোসটারশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি দুই শিক্ষার্থী ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা হলেন প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম রানা এবং এমএম রাজীব।

গত ১৬ থেকে ১৮ মে ছাত্র ইউনিয়নের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভোটিং সেন্টারে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। শুক্রবার দুপুর ১২টায় নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়।

নির্বাচিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অভিবাদন জানাচ্ছেন সর্বস্তরের বাংলাদেশি এবং দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা।

গ্লোসটারশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ২৪ বছর পরে এ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০ বছর পূর্ণ করবে। এ সময়ের মধ্যে কখনই দুইজন বাঙালি শিক্ষার্থী একসঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে জয়লাভ করেননি। কাজেই এটি একটি অনন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতে যেসব শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করতে আসবেন তাদের সাহস ও পথরেখা দেখিয়ে যাবে এ অর্জন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রায় ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

রাজীব মূলত এশিয়ান ব্লাক মাইনোরিটি গ্রুপদের নিয়ে কাজ করবেন, অন্যদিকে রানা জাতীয় ছাত্র ইউনিয়নে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করবেন। যেখানে ইংল্যান্ডের প্রায় ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন করে প্রতিনিধি জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়ে জাতীয় নেতা নির্বাচন করবেন। যদি তিনি সমগ্র যুক্তরাজ্যের ছাত্রদের নেতা নির্বাচিত হতে পারেন তবে তা বাংলাদেশের ইতিহাস এ অনন্য কৃতিত্ব হয়ে থাকবে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ছেলে আমিনুল ইসলাম রানা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োজিত ছিলেন এবং সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আইটি প্রকৌশলী হিসেবে বেশ কয়েক বছর নিয়োজিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুক্স থেকে ইতিমধ্যে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে গ্লোসটারশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শিক্ষার্থী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

নরসিংদীর মনোহরদীর ছেলে এমএম রাজীব যুক্তরাজ্যে আসার আগে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বেশ সুনামের সঙ্গে রিস্ক ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে গ্লোসটারশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। বাবার কর্মস্থলের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বেশ কিছু অঞ্চলে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। কাজেই তিনি বহুজাতিক সংস্কৃতি চর্চা ও সম্মানের ক্ষেত্রে সর্বদাই উদার মনোভাব সম্পন্ন যা তাকে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে যাবার ক্ষেত্রে বেশ সহায়তা করেছে। সেজন্যই তিনি এশিয়া, আফ্রিকা, এমনকি যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এমএম রাজীব বলেন, আমি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য যেকোনো কাজে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি সবার দোয়া ও শুভকামনা প্রার্থনা করছি এবং আশা করছি সামনের দিনগুলোতে উভয়ে আরও সুন্দর সুন্দর অবদানের মাধ্যমে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্প্রীতি এবং উন্নয়নে অবদান রাখব।