অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য ইটে রূপান্তর করা হবে। এসব ইট দিয়ে তৈরি হবে পল্লী-জনপদের সড়ক। পলিথিনসহ অন্যান্য অমূল্যবান প্লাস্টিক সম্পদে পরিণত হবে। এর ফলে কৃষি জমি ও জলাভূমি প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা পাবে। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে এমন উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের গ্রাম এলাকায় নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জৈব বর্জ্য থেকে কমপোস্ট স্যার, বিপজ্জনক বর্জ্য ইনসিনারেশন বা পুড়িয়ে ভস্ম করা, মূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃ:ব্যবহার এবং অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য ইটে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গ্রামাঞ্চলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে আমার গ্রাম-আমার শহর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ইতিমধ্যে দেশের ৮৭ হাজার ২৩০টি গ্রামের উন্নয়নের রূপকল্প তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে এই কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর ধাপে ধাপে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২১ কোটি টাকায় কাজ শেষ হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, এলজিইডির এই উদ্যোগ ভালো। প্লাস্টিকজনিত পরিবেশ দূষণ কমাতে এটা বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের এমন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের ইটের সড়ক নির্মিত হলে সড়কের স্থায়িত্বও বেশি হবে।
তিনি বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। খুব সচেতনভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তাহলে সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের দূষণ কমার পাশাপাশি অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।
সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ-এইচবিআরসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ইট বা ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এলজিইডি গ্রাম পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে এটা করছে। প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগ ইতিবাচক মনে হলেও সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনজুর মোহাম্মদ সাদেক বলেন, দেশের সিটি করপোরেশন ও শহর এলাকায়ও এখনো পরিবেশবান্ধব টেকসই বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এই অবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দুরূহ ব্যাপার হবে। আর শহর এলাকারমতো এত টাকাও সেখানে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের কৌশলগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এভাবে কাজ করতে পারলে সাধারণ মানুষ পরিচ্ছন্ন গ্রাম ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সহযোগী হতে পারবে।
তিনি বলেন, অমূল্যবান প্লাস্টিক জমির উর্বরতা ও জলাশয় নষ্ট করছে। এসব প্লাস্টিকের প্রতি মানুষের আগ্রহও তেমন থাকে না। এ জন্য আমরা অমূল্যবান প্লাস্টিক দিয়ে ইট তৈরি করেছি। এসব ইট দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো তৈরি করা হবে। আমার গ্রাম-আমার শহর প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ইট ব্যবহার করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এটার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।