পুঁজিবাজার চাঙাভাবে ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (২৩ মে) দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ও লেনদেন দুটোই বেড়েছে। সাড়ে ছয় মাস পর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করেছে।
গত কয়েক মাস ধরে ডিএসইএক্স এক দিন সামান্য বেড়েছে, আবার পতনও হয়েছে অল্প। এক দিনে এই সূচকের ২৪ পয়েন্ট উত্থান তিন মাস পর দেখা গেল। এর আগে গত ৫ মার্চ ডিএসইএক্স ৩৬ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়েছিল।
করোনাভাইরাস-পরবর্তী ২০২১ সালে বড় উত্থান হয়েছিল দেশের পুঁজিবাজারে। এরপর ২০২১ সালের শেষের দিকে শুরু হয় পতন। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৭ হাজার ৯০ পয়েন্ট। সেখান থেকে প্রায় ১৬ শতাংশ কমে ছয় হাজারের নিচে নেমে আসে ডিএসই সূচক। সেটা গত বছরের জুলাই মাসের ঘটনা। সেখান থেকে আবার জোয়ার এলেও ৬ হাজার ৬০০ পয়েন্টের ঘরে গিয়ে আবার কমতে শুরু করে সূচক। গত বছরের নভেম্বরে ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের নিচে নেমে যায় ডিএসই সূচক। এরপর বহুবার ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের খুব কাছাকাছি গিয়েও সেখান থেকে নিচে নেমে যায় ডিএসইর এই সূচক।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারের একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল এই ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট। গত কয়েক সপ্তাহের সুবাতাসে এবার সেই বাধা পার হলো। এখন বাজার ভালোর দিকে যাবে।
মঙ্গলবার ডিএসই সূচক বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। সূচক হয়েছে ৬ হাজার ৩০৬ পয়েন্ট। এই সূচক গত সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে বেশি। এর চেয়ে সূচক বেশি ছিল ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর, সে দিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৫৩ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৯২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। আগের দিন লেনদেন ছিল ৭০৭ কোটি ৪০ লাখ। মোট ৩৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয় ঢাকার পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৪টির কমেছে ৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৮টির।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন বিমা খাতে
গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও বিমা খাতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের ১৯ শতাংশ ছিল বিমা খাতে। এই দিন পাট খাতে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১২০ শতাংশ। আর ওষুধ খাতে লেনদেন বেড়েছে ১০০ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০টি কোম্পানি হচ্ছে: বিএসসি, ইস্টার্ন হাউজিং, নাভানা ফার্মা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুড, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিএলআইসিএল ও এডভেন্ট ফার্মা।
দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা প্রধান ১০টি কোম্পানি হচ্ছে: চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং, জিকিউ বল পেন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রহিম টেক্স, আরামিট সিমেন্ট, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, এনটিসি, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও নর্দান জুট।
দাম কমার শীর্ষে থাকা প্রধান ১০টি কোম্পানি হচ্ছে: যমুনা ব্যাংক, সিম টেক্স, স্ট্যান্ডাড ইন্স্যুরেন্স, নাভানা সিএনজি, নাভানা ফার্মা, আফতাব অটো, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লি., ফারইস্ট নিটিং ও আরএসআরএম স্টিল।
মঙ্গলবার দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে। মঙ্গলবার সিএসই সূচক বেড়েছে ৬০ পয়েন্ট। লেনদেন কমেছে ৫ কোটি।
মোট শেয়ার লেনদেন হয় ২১৪ কোটি। দাম বেড়েছে ৯১টির। কমেছে ৩৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৬টির।
অনেক দিন পর মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেশ বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ডিএসইর পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউস শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট ডিএসইর জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল। আজকে (মঙ্গলবার) বাজার সেটা পার করে ফেলেছে। দেশের পুঁজিবাজারের একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল এই ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট। গত কয়েক সপ্তাহের সুবাতাসে এবার সেই বাধা পার হলো। এখন বাজার ভালোর দিকে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’