জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যাশ ছাড়া লেনদেন ‘বাংলা কিউআর’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বজনীন লেনদেন প্ল্যাটফরম বাংলা কিউআরে (কুইক রেসপন্স) লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। গেল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে এ ব্যবস্থায় ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ হয়েছে। দুই হাজার ৪৯০ লেনদেনের বিপরীতে এ পরিমাণ লেনদেন এই প্ল্যাটফরম চালু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। গত ১৮ জানুয়ারি বাংলা কিউআরে লেনদেন শুরুর দিন মাত্র ১২ হাজার ৭০৮ টাকা লেনদেন হয়। এসব পরিশোধের বেশিরভাগই হয়েছে ফুটপাতের জামা, রাস্তার পাশে চা, জুতাপলিশ কিংবা ঝাল-মুড়ির দাম মেটাতে।

বাংলা কিউআর হলো দেশের সব ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) অ্যাপভিত্তিক লেনদেন নিষ্পত্তির একটি অভিন্ন প্ল্যাটফরম। এই প্ল্যাটফরমে যুক্ত যে কোনো ব্যাংক বা এমএফএসের গ্রাহক কিউআর থেকে পরিশোধ করতে পারেন। এর ফলে কোনো দোকানে একটি ব্যাংকের কিউআর থাকলেই যে কোনো ব্যাংক এবং এমএফএসের গ্রাহক পরিশোধ করতে পারবেন। এতে মার্চেন্টের ঝামেলা কম।

আবার গ্রাহককেও পরিশোধের জন্য নিজের ব্যাংক বা এমএফএসের কিউআর খুঁজতে হবে না। লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়ানো, ঝুঁকিমুক্ত করা, কম খরচ ও দ্রুত করতে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনের প্রচারণা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নগদ লেনদেন কমাতে ক্যাশলেসের প্রচার চালানো হচ্ছে। অনলাইন লেনদেনে গ্রাহকের ঝুঁকি কম থাকে। আবার পুরো টাকা যেহেতু সিস্টেমে থাকে; সুতরাং ব্যাংকগুলোর তারল্যের ওপর চাপ কমবে। সারাদেশে এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যাশলেস প্রচারের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ঢাকার পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহী ও নাটোরের আটটি উপজেলায় মাইক্রো মার্চেন্ট পয়েন্ট থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। এতদিন শুধু বড় শপিং মল বা দোকানে নির্ধারিত ব্যাংকের কিউআরে পরিশোধ করা যেত। ক্যাশলেস প্রচারের অংশ হিসেবে ফুটপাত, মহল্লার দোকান এবং ছোট রেস্তোরাঁয় কিউআরে পরিশোধ করা যাচ্ছে। এসব দোকানদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটি করে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে ব্যাংক বা এমএফএস। দেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক এবং ১৩টি এমএফএস রয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি ব্যাংক ও এমএফএস এ ব্যবস্থায় যুক্ত হলেও পর্যায়ক্রমে অন্যরাও আসবে। এ ছাড়া পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটররাও (পিএসও) এখানে যুক্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ মার্চ ঢাকার বাইরে ৮টি উপজেলায় বাংলা কিউআরে লেনদেন শুরু হয়। ওইদিন ৯৪১টি লেনদেনের বিপরীতে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। পরদিন ১ হাজার ৪৮টি লেনদেনের বিপরীতে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। প্রতিনিয়ত লেনদেন বেড়ে গত রোববার ৮৩ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলা কিউআরের পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব কিউআরেও পরিশোধ হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ নিজস্ব কিউআরে ৭২৭টি লেনদেনের বিপরীতে পরিশোধ হয় প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এর ঠিক এক মাস আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫১২টি লেনদেনের বিপরীতে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। বাংলা কিউআরে আনুষ্ঠানিক লেনদেন চালুর দিন নিজস্ব কিউআরে ২৮৭টি লেনদেনের বিপরীতে ৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ হয়।

২০২৬ সালের মধ্যে মোট লেনদেনের অন্তত ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামী ৩০ জুনের পর ব্যাংক বা এমএফএসের নিজস্ব মালিকানার কিউআর থাকলে আবশ্যিকভাবে তা বাংলা কিউআরে প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। আবার মাইক্রো মার্চেন্টের ক্যাশ আউট চার্জ না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অবশ্য চার্জ না নেওয়ার নির্দেশনার পর এমএফএস এজেন্টদের অনেকে মাইক্রো মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে চার্জ ফ্রি ‘ক্যাশ আউট’ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে এ ধরনের অনিয়ম ধরার পর বেশকিছু হিসাব বন্ধ করা হয়েছে।