সকাল ৮টা বাজতেই রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁয়ে ছুটছে স্বপ্নের মেট্টোরেল। ধীরে ধীরে বাড়ছে মেট্রোরেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা। মিরপুর এলাকার সবগুলো স্টেশন চালু হওয়ায় এখন নিয়মিতই অফিসগামী লোকেরা তাদের প্রধান বাহন হিসেবে মেট্রোরেলকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে মিরপুর এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে গতি বেড়েছে। ঈদ-উল-ফিতর ও পহেলা বৈশাখ সামনে প্রাণ ফিরেছে বেনারসি পল্লীর। নানান রং এবং নকশার শাড়ি, উঠানো হয়েছে বেনারসি পল্লীর প্রতিটি শোরুমে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিপণিবিতানগুলোতে বাহারি সাজে সাজানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, দীর্ঘদিন পর এবারের রমজানে হাসি ফুটেছে বিক্রেতাদের মুখে। আগের তুলনায় ক্রেতার ভিড় ও বেচাকেনা বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে পল্লীর বেচাকেনা। সকালের দিকে অধিকাংশই ক্রেতাই মেট্টারেলে চড়ে উত্তরা থেকে এসেছেন। কেউবা মেট্টোরেলের আগারগাঁও স্টেশন থেকে উঠে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে নামছেন। কেনাকাটা করে আবার মেট্টোতে চড়েই আবার ফিরছেন নিজ গন্তব্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকালের দিকে মেট্টোরেল ভ্রমণ শেষে অনেক ক্রেতাই বেনারসি পল্লীতে আসছেন পছন্দের শাড়ি কিনতে। মিরপুর এলাকার সড়ক এখন বেশ উন্নত থাকায় অনেক ক্রেতাই নিজস্ব যানবাহনে আসছেন বেনারসি পল্লীতে।
লামিয়া বেনারসি হাউজের বিক্রেতা জানান, রমজান শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভালো বিক্রি হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। করোনার সময় তারা ভয়াবহ সময় পার করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর চলে গেল করোনায়। সে সাথে মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তার অবস্থা ছিল বেহাল। এসবের কারণে এতদিন ব্যবসা করতে পারিনি। এবার রাস্তাও ভালো হয়েছে। করোনা মহামারীও নেই। তাই প্রত্যাশা ছিল ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে বিস্তর ফারাক। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার নিত্যনতুন ডিজাইনের সাথে মানের দিক দিয়েও ভালো শাড়ি তোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাস্টমারের অভাবে মনে হচ্ছে এবারো ব্যবসা আশানুরূপ হবে না।
মা বেনারসি শাড়িজের ম্যানেজার জানান, তাদের এখানে বিপুল পরিমাণ শাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনও করা হয়েছে। কিন্তু কাস্টমার খুব বেশি নেই। তিনি বলেন, করোনার আগে প্রতি বছরই রোজা শুরুর পর পাইকারি ক্রেতাও আশানুরূপ মিলেছে। এভাবে হলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কর্মচারী ও দোকান খচর দিয়ে যদি কিছু টাকা হাতে না থাকে তবে এ ব্যবসা কিভাবে টিকবে।
ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। মানুষের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। ফলে মানুষ নিজের আয়ের মধ্যে বাজেট কাটছাঁট করে হয়তো চলার চেষ্টা করছে বলেই কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। গত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম একটু বেড়েছে জানিয়ে লাল বেনরসির একজন বিক্রেতা জানান, কাপড়ের উৎপাদনে খরচ বাড়লে তার প্রভাব দামের মধ্যেই পড়ে। কারণ খরচ হিসাব করেই শাড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী দাম বেড়ে যায়। যা মেটানো ক্রেতাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।
চাইলেও তারা দাম কমাতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, দোকানের ভাড়া-কর্মচারী ও অন্যান্য সব খরচ বাদ দিলে এখন ব্যবসায় তেমন কিছু থাকে না। তারপরও এ ব্যবসাটা ভালো লাগা থেকে নেশার মতো হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা এটাকে ধরে রাখতে চান। কিন্তু এখন বিক্রির যা অবস্থা তাতে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
উচ্চ-মধ্যবিত্তরা অনেকে দেশের বাইরে শপিং করতে যান এমনটা জানিয়ে শাহীনা ফ্যাশনের কর্মকর্তা জানান, এখানে বেনারসি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায়ও পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকের ধারণা এগুলোর সবই অনেক দামি। ফলে এ ধারণা থেকে মধ্যবিত্তের অনেকে এখানে শপিং করতে আসেন না। অন্য দিকে উচ্চবিত্তের মধ্যে বেশির ভাগই দেশের বাইরে শপিং করেন ফলে তারও একটা প্রভাব পড়ে ঈদ মার্কেটে। এসব নানান কারণে এবার ক্রেতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজ থেকে মার্কেট জমবে এমনটাই তাদের প্রত্যাশা।
বেনারসি পল্লী কয়েকজন বিক্রেতা জানান, ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্যের দিক বিবেচনায় রেখে এবার নিয়ে এসেছেন দেশীয় ঐতিহ্যের নানা বাহারের শাড়ি। এসব শাড়িতে কারিগরদের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে দেশের ঐতিহ্য। এর মধ্যে রয়েছে কাতান, গাদোয়াল, ইক্কত, তসর, মটকা, মেঘদূতসহ নানান রকমের শাড়ি। মূল্যভেদে এগুলোর দাম ২০০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাদের মতে, এ বছর ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে কাতানের পাশাপাশি গাদোয়াল, ইক্কত, তসর, মটকা, মেঘদূত শাড়ি।
বেনারসি পল্লীর নামকরা শোরুমের মধ্যে রয়েছে মনেরেখ, শাহিনা ফ্যাশন, তানহা, আলহামদ, লীলাবালি, সিল্ক সম্বার, মিরপুর বেনারসি কুটির, বেনারসি মিউজিয়াম, বিয়ের বাজার, পাবনা এম্পোরিয়াম, ব্রাইডাল, মাহমুদা শাড়ি, টপটেন, গোল্ডেন বেনারসি ইত্যাদি। মিরপুর বেনারসি কুটিরের বিক্রয়কর্মী জানান, ক্রেতা আসছেন, বিক্রিও হচ্ছে আগের তুলানায় ভালো। বলা যায়, বহুদিন পর প্রাণ ফিরেছে বেনারসি পল্লীর। গোল্ডেন বেনারসির বিক্রয়কর্মী জানান, খুচরা ক্রেতার সঙ্গে পাইকারী ব্যবসায়ীরাও আসছেন।
গুলশান থেকে শাড়ি কিনতে আসা নাসরিন সিরাজ জানান, ‘আমি বিভিন্ন উৎসবে বেনারসি পল্লী থেকে শাড়ি কিনে থাকি। এবার মিরপুরের রাস্তাঘাট বেশ উন্নত থাকায় দুই বছর পর বেনারসি পল্লীতে শাড়ি কিনতে এসেছি।