বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের টি-শার্টের কদর বাড়ছে

উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানিতে দেশের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও নিট টি-শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার এবং অন্তর্বাসসহ (আন্ডার গার্মেন্টস) এখনো গুটিকয়েক আইটেমের ওপরই দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত নির্ভরশীল। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একক পণ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে কটন টি-শার্ট থেকে। আর ২০২২ সালে প্রায় ৮৯৩ কোটি ডলারের নিট টি-শার্ট রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের কটন টি-শার্টে ৫৯৪ কোটি ডলার এবং মেয়েদের কটন টি-শার্ট থেকে আয় এসেছে ৩৬৩ কোটি ডলার। এই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫.৬০ শতাংশ বেশি এবং বিশ্ববাজারে এর অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ। এ ছাড়া এই আয় দেশের মোট রপ্তানির ১৯.৫৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, পোশাক তৈরিতে খরচ বেশি পড়া ও চীন থেকে বৈশ্বিক ক্রেতাদের স্থানান্তর বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। তাঁরা বলেন, দেশের বেশির ভাগ উদ্যোক্তা সুতার তৈরি পোশাক বানায়। কেউ কেউ কৃত্রিম তন্তুর পোশাকও তৈরি করে। তবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে মৌলিক পোশাক তৈরিতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করেছে। ফলে বিশ্ববাজারের বাংলাদেশের টি-শার্টের কদর বাড়ছে। তবে গত বছর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ গড় মূল্য কম পায়।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘২০২২ সালে বাংলাদেশ চার হাজার ৫৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে পোশাকসহ ১০টি আইটেম থেকে আয় তিন হাজার ৯৪ কোটি ডলার। অন্য শীর্ষ আইটেমগুলোর মধ্যে রয়েছে সুতির জার্সি এবং প’লওভার, জার্সি পুরুষ বা ছেলেদের সুতির শার্ট, নারী ও পুরুষের সুতির ট্রাউজার।

আইটিসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ছেলেদের সুতির টি-শার্টের মূল্য প্রায় ১.৪৭ ডলার। পাকিস্তান, ভারত, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে এই মূল্য যথাক্রমে ১.৫৩, ২.১৪, ২.১৮ এবং ৩.৩২ ডলার।

বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘গত বছর সেরা ১০ আইটেমের মাত্র ১২ শতাংশ নন-কটন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় এসেছে। অন্যদিকে সুতার তৈরি পণ্য থেকে আয় এসেছে ৮৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুতা থেকে তৈরি পণ্য উৎপাদনে অভিজ্ঞতা এবং সক্ষমতা বেশি। যদিও বৈশ্বিক বাজারের ৭৫ শতাংশ নন-কটন। বাংলাদেশের খেলাধুলার পোশাক অন্তর্বাস এবং বাইরের পোশাকের মতো উচ্চমানের পোশাক তৈরির সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। এসব পণ্য তৈরিতে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পিছিয়ে আছি আমরা। এ জন্য সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তি এবং উন্নত জ্ঞানের ওপর জোর দিতে হবে।’

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে ট্রাউজার আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ হলো এক হাজার ৬৬৮ কোটি ডলার। নিট টি-শার্ট আমদানি হয়েছে পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৯৫৮ কোটি ডলার। সোয়েটার আমদানি হয়েছে ছয় হাজার ৩৩২ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ ৭৩৯ কোটি ডলার আয় করে। এ ছাড়া অন্তর্বাস (আন্ডার গার্মেন্টস) আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ডলারের। বাংলাদেশের আয় ২৪৫ কোটি ডলার।